কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং? প্রথম দিককার কষ্ট নাকি টিকে থাকার জন্য লড়াই?
কোনটাই নয়। তার নিশ্চয় কিছু কারন আছে। জীবনের শুরুর দিক থেকেই আমার কিছু হয়ে ওঠার তাড়া ছিল না। আমার বাড়িতে আমার থেকে পড়াশোনায় সবাই ভাল, খেলাধুলাতেও ভাল। কাজেই সেই অর্থে আমি বাড়ির ব্লাকশিপে ছিলাম। আলাদা কিছু করব তা ভাবিনি। একটাই জিনিস ভাবতাম যাতে দিনটা আনন্দে কাটাতে পারি। কিভাবে সুখে কাটানো যায়। কিছু একটা হয়ে উঠতে হবে এর পিছনে খুব একটা দৌড়াইনি। অভিনয়টা আমার জীবনে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মত। আমায় কয়েকজন ঘাড় ধরে অভিনয় জগতে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর একটা দীর্ঘ সময় থিয়েটার করেছি। চাকরি ছেড়েছি। প্রায় ৭ বছর অন্ন সংস্থান ছিল না। কিন্তু যেহেতু কখনই আমার মনে হত না, কিছু একটা হয়ে উঠতে হবে, কাজেই আমার দিন আনন্দেই কাটত। এখন শুনলে মনে হবে বাড়িয়ে বলছি। মোটেই তা নয়। সত্যি, সেই সময়ও আনন্দেই কাটাতাম। প্রতিদিন সকালে উঠে মনে করতাম কি করলে আজকের দিনটা ভাল করে কাটাতে পারি। আমি আদ্যপ্রান্ত পজিটিভ একজন মানুষ। যে প্রশ্নটা করলে স্ট্রাগল নিয়ে, এই স্ট্রাগল সবসময়ই থাকে। যেমন খেটেখুটে একটা ছবি বানানো হল, সেটা চলল না। কোন একটা কাজ নিয়ে দারুন উন্মাদনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল না। ক্যান্সেল হয়ে গেল। এইরকম বহু জিনিস থাকে। জীবনে অনেক সময়েই এইরকম হয়েছে আমার সঙ্গে। কিন্তু এর দুঃখ কোনদিনই এক আধ বেলার থেকে বেশি দিন থাকেনি। তারপর আবার নতুন দিন। যেটা হল না, বা যেটা হতে পারত তা নিয়ে খুব বেশি ভাবি না। দুশ্চিন্তা মাথায় আসতে দিই না। আনন্দে বাঁচাটা অনেক বেশি জরুরী। তাই সেই বেঁচে থাকাটা অনেক বেশি দরকার। এটা একটা জার্নি। স্ট্রাগল নয়।
আপনার ড্রিম প্রোজেক্ট কি?
এটার উত্তর খানিকটা আগেই ছিল। যেহেতু কোন স্বপ্নই দেখিনি অভিনেতা হব, তাই সেই অর্থে ড্রিম প্রোজেক্ট মাথাতেই আসবে না। বরং আমার কাছে যা কাজ এসেছে তাতে মনে হয়েছে, বাপরে এই কাজটা! এটা আমার জন্য এসেছে। করেও ফেললাম, সবার ভালও লাগল, হাততালিও দিল। আবার অ্যাওয়ার্ডও পেলাম তাই ওটা আসলে ভালও হত, বা ওই চরিত্রটা আসলে ভালও হত এই ভাবনা মাথাতেই আসেনি। সবসময় ভেবেছি যেই কাজটাই আসুক তা যেন মন দিয়ে করতে পারি, আমার একশ শতাংশ দিতে পারি। ছবিটা হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবি নাও হতে পারে। আমার বন্ধুরাই হয়ত বলেছে, তুই তো ১৮ বার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছিস। বা আদতে এমন একটা ছবিতে অভিনয় করেছি যেটার বিষয় বেশ শক্ত। কোন ছবি হয়ত বিদেশে অল্প কিছু দর্শক দেখলেন, বা এদশে দর্শকও কম হল। অনেকেই বলেন এইরকম ছবি করে কি আনন্দ পাই! কিন্তু আমার মনে হয় যেই চরিত্রই পাই বা যাতেই অভিনয় করি সেটা যেন মন দিয়ে করতে পারি। যত্ন আর দরদ দিয়ে অভিনয় করি। তা হতেই পারে ১৯ নম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীই, মানুষ আমার অভিনয়টা দেখুক। একটা কথা মনে রাখা ভীষণ দরকার। প্রফেশনালিজম মানে শুধু নিজের টাকা পয়সা বুঝে নেওয়া নয়। কতটা আমি দিলাম সেটা মাথায় রাখা ভীষণ দরকার। হতে পারে আমি অসুস্থ, আমার কোন আত্মীয় মারা গেছেন, এই কোন কিছুই কাজের মধ্যে আসা উচিত না। কেউ যেন বলতে না পারে আমার জন্য কোন সমস্যা হয়েছে, আমার উপর ভরসা রেখেছেন তাদের কাছে আমার জন্য কোন অভিযোগ না থাকে। কোন ছবি হিট হবে বা কোনটা ফ্লপ হবে তা হয়ত আমার হাতে নেই। কিন্তু আমার সিনসিয়ারিটি নিয়ে কারোর কাছে কোন প্রশ্ন না থাকে।
আপনার প্রিয় খাবার কি?
আমি সবরকম সুস্বাদু খাবার খেতেই পছন্দ করি। খাবারের দিক থেকে কোন রকম ব্রান্ডিং নেই। এমন কিছু কাজ করিনা যাতে ইতালিয়ন, চাইনিজ এই ধরনের খাবারই খেতে হবে। ভাত, ডাল, আলু ভাজাও যদি কেউ যত্ন করে খাওয়ায় সেটা আনন্দ সহকারে খাবো। বাঙালির চাইনিজ মানেই চাউমিন আর চিলি চিকেন। এই খাবার শুটিং ফ্লোরে প্রায়ই আসে। তাই আজকাল মোগলাই বেশি ভাল লাগছে। বিরিয়ানি খেতে ভালবাসি কিন্তু প্রতিদিন তো খাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে শরীরের দুষ্টু গ্রহরা জেগে উঠবে। তবে বিরিয়ানি বলতে মাটন বিরিয়ানি, চিকেন বা ভেজ বিরিয়ানি মোটেই বিরিয়ানির মধ্যে পড়ে না। এ গুলো অন্য খাবার যেটা বিরিয়ানি বলে চালানো হয়। মিষ্টি খেতে ভালবাসি। আর লুচি, পরোটা,কচুরি ওসব সময় ভাল লাগে। আমার জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়না। একটা গল্প বলি, ছোটবেলা বা এখনও কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে একের বেশি লুচি জাতীয় খাবার খেলেই বন্ধুরা বা কখনও বড়রাও বলেছেন, কি বোকার মত লুচি খেয়ে পেট ভরাচ্ছিস। যেন মাছ, মাংস না খেলে কতই না আমি বোকা হয়ে গেলাম। আমার যেটা পছন্দ সেটাই তো খাবো। রান্নায় মিষ্টি খেতে ভালবাসি। তবে আমি কট্টর বাঙাল। সবই পছন্দ করি। এমনকি নিম- বেগুনও ভালবাসি।
Facebook Comments