গত দুই দিন ধরে সৌদি আরবের জেড্ডা শহরে চললো আইপিএলের (IPL) মেগা নিলাম। ৫৭৭ জন ক্রিকেটারের ভাগ্য নির্ধারিত হলো। দল দল মিলিয়ে খালি স্লটের সংখ্যা ছিলো ২০৪। বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি নিজেদের সম্পূর্ণ প্লেয়ার কোটা পূরণ না করায় বিক্রি হলেন মোট ১৮২ জন। সব মিলিয়ে ৬৮২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হলো এই দুই দিনে।
ইতিপূর্বে বহুবার আইপিএলের (IPL) অকশনে ভিনদেশী ক্রিকেটারদের জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে দেখা যেত দলগুলিকে। এবার কিন্তু ভারতীয় তারকাদের উপরেই আস্থা রাখলেন তাঁরা। সর্বোচ্চ অর্থ পাওয়া তিন জনই ভারতীয়। ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant) নয়া রেকর্ড গড়লেন ২৭ কোটি পেয়ে। শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) পেলেন ২৬.৭৫ কোটি। ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ঝুলিতে ২৩.৭৫ কোটি টাকা। ভালো দাম পেলেন আর্শদীপ, চাহাল, মহম্মদ সিরাজ, মহম্মদ শামি, জিতেশ শর্মারাও।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আগ্রহ দেখিয়েছে অস্ট্রলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকাদের নিয়ে। এমনকি উপমহাদেশ থেকে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রাও ডাক পেয়েছেন টুর্নামেন্টে। ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমান (Mustafizur Rahman), মেহদী হাসান মিরাজ (Mehidy Hasan Miraz), শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan), তাস্কিন আহমেদ (Taskin Ahmed), রিশাদ হোসেন, লিটন দাস, তৌহিদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, শেখ মেহদী হাসান, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রাণা’র (Nahid Rana) নাম ছিলো অকশন লিস্টে। ৭৫ লক্ষ থেকে ২ কোটির মধ্যে বেস প্রাইস বা ভিত্তি মূল্য রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ১২ জনের মধ্যে শিকে ছেঁড়ে নি একজনেরও ভাগ্যে। অর্থাৎ আগামী ১৪ মার্চ থেকে শুরু হতে চলা টুর্নামেন্টে থাকছেন না বাংলাদেশের একজনও প্রতিনিধি।
এর আগে কলকাতা নাইট রাইডার্স, সানরাইজার্সের হয়ে খেলেছিলেন শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan)। জিতেছেন ট্রফিও। কিন্তু এবার তাঁর নামই ডাকা হয় নি নিলাম কক্ষে। প্রাক্তন নাইট রাইডার্স সদস্য লিটন দাস’কে (Litton Das) নিয়েও আগ্রহ দেখায় নি কোনো দল। কারও উইশলিস্টে ছিলেন না রাণা, হাসান মাহমুদরাও। বাংলাদেশী ক্রিকেটজনতা আশায় ছিলেন যে হয়ত মুস্তাফিজুর রহমানের (Mustafizur Rahman) উপর বাজি ধরবে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। তাঁর নাম ডাকা হলেও আগ্রহ দেখায় নি কোনো দল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা যে ২ কোটি টাকার ভিত্তিমূল্যই দল পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কাটার মাস্টারের’ জন্য। তরুণ অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেন (Rishad Hossain) সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলতে চান। নাম ঘোষণা হলেও তাঁর জন্য প্যাডেল তোলে নি কেউই।
কেন আইপিএলে (IPL) ব্রাত্য বাংলাদেশ? ১২ ক্রিকেটার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পদ্মাপারের সংবাদমাধ্যম। ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিকেট মাঠে পরাজয়ের পর যেমন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিসিসিআইকে দুষতে দেখা যায় পড়শি দেশের মিডিয়া ও সমর্থককূলের একাংশকে, এ ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে অবিকল একই ছবি। বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের বাদ পড়ার পিছনে বিসিসিআই-এর হাত দেখছেন কেউ কেউ। তাঁদের দাবী যে নিলাম তালিকায় টাইগার বাহিনীর তারকাদের একদম পিছনের দিকে রেখেছে ভারতীয় বোর্ড। তাঁদের নাম ঘোষণা করার আগেই অকশন পার্সের অনেকখানি খরচ করে ফেলেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। ফলত দল পান নি মুস্তাফিজ, রিশাদ’রা (Rishad Hossain)। অনেকে আবার শাকিবদের বাদ পড়ার দায় চাপাচ্ছেন দুই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতির উপর।
Facebook Comments