কলকাতায় প্লেব্যাক মহিলা কণ্ঠে নতুন এসেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন গায়িকা শুভলক্ষী দে। ইতিমধ্যে কাজ করা হয়ে গেছে একটি বলিউড প্রজেক্টেও। নিয়মিত যাতায়াত করছেন মুম্বাই। এছাড়াও পুজোর আগেই কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে আনতে চলেছেন তার নতুন ব্যান্ড ‘রেওয়াজ’। আপাতত ‘রেওয়াজ’ এর কাজেই ডুবে রয়েছেন তিনি। এই নামটার সাথে সাথে কিছু নতুন গান মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শুভলক্ষী। শুভলক্ষীর কথায়, ‘মানুষ পুরনো গান তো শুনেইছেন। মানুষকে কিছু ভালো নতুন গান উপহার দিতে না পারলে আমাদের নিজেদের আগ্রহটাই হারিয়ে যাবে। তাই এখন নতুন গান বাঁধার কাজে মেতেছেন শুভলক্ষী। ‘রেওয়াজ’কে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর তিনি। সাথে রয়েছেন ব্যান্ডেরই এক সদস্য দেবজিৎ চক্রবর্তী। ব্যান্ডের জন্য নতুন সুর বাঁধছেন তিনিও। টলিউডে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে নিজেদের ব্যান্ড ‘রেওয়াজ’ সব কিছু নিয়ে What’s New Life এর সামনে অকপট আড্ডায় বসলেন শুভলক্ষী এবং দেবজিৎ।
১. সঙ্গীতের জগতে আসার ভাবনাটা কি প্রথম থেকেই ছিল?
শুভলক্ষী- ছোটথেকেই বলতে পারেন। আমার জার্নিটা শুরু হয় আমার বাড়ি থেকেই। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাড়িতে সবাই গান বাজনা করেন। তাই ছোটো থেকেই সঙ্গীতটা আমার মধ্যে ছিল। আমার মা্ দিদিমা খুব ভালো গাইতেন। ওদের কাছ থেকেই আমার এগুলো পাওয়া। এভাবেই শুরু হয় আমার সঙ্গীতচর্চা। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত একজন গায়িকা হিসেবে যা পেয়েছি সবই মানুষের ভালোবাসায়।
২. নতুন কি প্রজেক্ট আনতে চলেছেন?
শুভলক্ষী- আমরা একটি নতুন ব্যান্ড আনতে চলেছি। খুব তাড়াতাড়িই মানুষ সেটা দেখতে পাবে। আমরা এই মুহূর্তে নতুন ব্যান্ডের গানের সিলেকশন করছি। আমরা কি ধরনের গান রাখব আমাদের ব্যান্ডে। পুরনো এমন কিছু গান অবশ্যই থাকবে যেগুলো আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। তার সাথে কিছু নতুন গানও থাকবে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় যে, পুরনো গান তো থাকবেই, কিন্তু তার সাথে কিছু নতুন গান না থাকলে আমাদের নিজেদের আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ তো পুরনো গান গুলো শুনেইছেন। পুরনো গানের সাথে সাথে তাদের কিছু নতুন গান উপহার দিতে না পারলে তারাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
৩. কলকাতাতে এখনো পর্যন্ত কতগুলো ছবিতে প্লেব্যাক করেছ ?
শুভলক্ষী- আমার প্রায় দশটা ছবিতে প্লেব্যাক করা হয়ে টলিউডে। যেগুলি সবই ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে। আমি প্রথম প্লেব্যাক করি রচনা ব্যানার্জী’র লিপে। ‘কলির অর্জুন’ ছবিতে। মৌবনি সরকার সেই ছবির অভিনেত্রী ছিলেন। সৌমিত্র কুন্ডু এই ছবিতে আমাকে গান গাইতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রায় দশটা ছবিতে প্লেব্যাক করেছি। অতি সম্প্রতি আমি একটি বলিউড প্রজেক্টেও কাজ করেছি। খুব তাড়াতাড়িই মুক্তি পাবে সেটা। আমি চাই মানুষকে কিছু ভালো গান উপহার দিতে। যেগুলো মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে, ভালো গান মানুষ কখনো ফিরিয়ে দেয় না।
৪. কলকাতাতে প্লেব্যাকের সিনারিওটা যদি একটু বলো?
শুভলক্ষী- দেখুন, আমাদের কলকাতাতে যেটা হয় সেটা হল অযাচিত কম্পিটিশন। আমার মনে হয় না যে কম্পিটিশনের কোন দরকার আছে। আমি যেহেতু নিয়মিত মুম্বাই যাতায়াত করি, তাই বুঝতে পারি ওখানের সাথে কলকাতার কাজের তফাৎ । এখানে নতুনদের কেউ উৎসাহ দিতে জানে না। বদলে নেগেটিভ জিনিসটা চোখের সামনে তুলে ধরে। আর সঙ্গীত পরিচালকদেরও হাতেগোনা কয়েকটি নাম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নতুনদের সুযোগ করে দিতে হবে। মুম্বাই থেকে শিল্পী এনে এখানে প্লেব্যাক করানো হচ্ছে। এখানকার শিল্পীদেরও সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ।
৫. তোমাদের ব্যান্ডটা নিয়ে যদি কিছু বলো ?
দেবজিৎ- আমাদের ব্যান্ড’টাকে নিয়ে আমাদের কিছু নতুন ভাবনাচিন্তা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি গানের স্ট্রাকচার’টা এক রেখে মিউজিকে কিছু বদল ঘটানোর। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ মেলোডি ইন্সট্রুমেন্টের ওপর কাজ। সেক্ষেত্রেও স্ট্রাকচার’টা এক থাকবে কিন্তু মিউজিকে পরিবর্তন আনবো আমরা।
৬. ক’জন সদস্যকে নিয়ে গড়ে উঠছে এই ব্যান্ড ?
দেবজিৎ- আমাদের প্রথমে ঠিক ছিল তিন জনকে নিয়ে তৈরি হবে এই ব্যান্ড। কিন্তু পরে শুভলক্ষী’দি বলে আরো কিছু মিউজিসিয়ান বাড়াতে। তাই এখন চেষ্টা করছি মেলোডি কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট বাড়াতে। ৬ জন থাকবে এই ব্যান্ডে।
৭. নতুন একটা ব্যান্ড আনা তো স্বপ্নের মতো। অনেক ব্যান্ড আসে, আবার চলে যায় কেউ কেউ রয়ে যায়। এই চরম অনিশ্চয়তার মুখে তোমাদের স্বপ্ন টাকে মানুষের মধ্যে কিভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছ ?
শুভলক্ষী- বিপ্লব দা আমাদের ব্যান্ডের মার্কেটিং-এর পুরো বিষয়টি দেখছেন। উনি আমাদের খুবই সাহায্য করছেন। ওনার সাথে আমার দাদা বোনের সম্পর্ক। এছাড়া আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে কাজ করছি এবিষয়ে। তবে যেটা আমাদের আসল লক্ষ্য সেটা হল, মানুষকে কিছু ভালো গান উপহার দেওয়া। মানুষকে নতুন ইউনিক কিছু মিউজিক দিতে পারলে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে যাব। সবটাই দর্শকের নির্ভর করছে। আমাদের ব্যান্ডের নাম হল ‘রেওয়াজ’। যেটা আমরা সঙ্গীতশিল্পীরা নিয়মিত করে থাকি। অনেক ভেবেচিন্তেই আমরা এই নামটা ঠিক করেছি। নামটা মানুষের ভালো লাগবে আশা করি।
৮. তোমাদের ব্য্যান্ডের প্রথম গানটা কবে শুনতে পাবে ?
শুভলক্ষী- আমরা আশা রাখছি পুজোর আগেই আমাদের প্রথম গান আমরা সামনে নিয়ে আসবো। পুজোর সময়ে অনেক গান রিলিজ হয়। তাই ওই সময়টাকে আমরা লক্ষ করছি না। পুজোর বেশ কিছুদিন আগেই আমরা প্রথম গান নিয়ে হাজির হব।
আপাতত নিজেদের ব্যান্ডের কাজেই ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন শুভলক্ষী, দেবজিৎরা। ‘রেওয়াজ’কে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে দৃঢ়সংকল্প তারা। তাদের বিশ্বাস, পুরনো আর নতুন কিছু গানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করবেন তারা। সে রাস্তায় যতই প্রতিবন্ধকতা আসুকে তাতে টিম ‘রেওয়াজ’ এর কুছ পরোয়া নেহি। নতুন এবং ভালো গান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষেই আপাতত দিন রাত এক করে কাজ চলেছে টিম ‘রেওয়াজ’। What’s New Life এর তরফ থেকেও টিম ‘রেওয়াজ’ এর জন্য রইল একরাশ শুভেচ্ছা।
ছবি- দেবাংশু মল্লিক
Facebook Comments