জাদু পরিবারে জন্ম, বড় হয়ে পিছনে তাকালে কি মনে হয়?
ম্যাজিক পরিবারে বড় হয়েছি, বাবা এত পরিচিত একজন মানুষ। চায়ের কাপ ভেসে আসছে, টোস্টার থেকে পাউরুটি বেরিয়ে আসছে, এইগুলো আমার কাছে খুব সাধারণ ছিল। মনে হত সব বাড়িতেই এমন হয়। আমরা আসলে রোমান্টিক পরিবার। এই রকম পরিবারে জন্মগ্রহণ করার দুটো দিক আছে, খুশি মনে বড় হওয়া আর কেউ বিশ্বাসী করতে চায়না আমরাও খুব সাধারণ, সবাই আমাদেরকেই কল্পনার জগতের ভাবে। আমার উপর নিশ্চয় কোন আশীর্বাদ আছে যার জন্য আমি এরকম কোন পরিবারে জন্মেছি। এটা আমার গর্ব।
স্কুলের বন্ধুরা কি বলত ছোটবেলায়?
একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে, বন্ধুরা আমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখত, পরে জানতে চাইতাম কেন এরকম করে! তখন বলত “এই তুই ভ্যানিশ হয়ে যাবি না তো? তখন ভাবতাম এরকম হয় নাকি! ওরা বলত হতেই পারিস পি সি সরকারের মেয়ে তো, ভ্যানিশ হতেই পারিস।
জাদু থেকে অভিনয়, কি ভাবে এই প্রফেশনে এলে?
ছোটবেলা থেকেই ভীষণ আর্টিস্টিক মনোভাব থাকত। সব সময় মনে হত নতুন কিছু করব। আমার পরিবারও বুঝত আমি আর্ট আমায় ঘিরে রয়েছে। যখন স্কুলে সবাই পড়াশোনা করত, আমি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম গাছে পাখি বসে আছে। কি রঙের পাখি, কিভাবে ডাকছে। সেইখান থেকেই অভিনয়ে আসা। নতুন কিছু করার ইচ্ছায়। আর জাদুও তো অভিনয় ছাড়া হয়না। জাদু ভালবাসতে ভালবাসতে কখনও অভিনয় শিখে গেছি নিজেই জানিনা। তবে এই জগতের মানুষদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। প্রতেকেই আদর যত্নে বড় করেছে, আমার প্রত্যেক ডিরেক্টর, প্রোডিউসার আমায় অনেক সাপোর্ট করে এসেছে। ওদের জন্যই এই কাজ করতে পারছি।
তোমার বাড়িতে সিংহ ছিল, একসঙ্গে বড় হয়েছ, এখন ভাবলে কেমন লাগে?
শুধু সিংহ নয়, হাতি, ঘোড়াও ছিল। এটাও একটা আশীর্বাদ যে আমি বা আমরা ওদের সঙ্গে বড় হয়েছি। হ্যাঁ একটা কুকুরকে বড় করা আর একটা সিংহকে বড় করা তো এক নয়, সিংহ অন্য রকম খাবার খাবে, ওকে স্নান করানোর পদ্ধতি এক নয়। সকাল বেলায় যেভাবে ডাকবে বা সন্ধ্যাবেলায় যে ভাবে গর্জন করবে, তাতেই পাশের বাড়ির লোক পালিয়ে যেতো। ওদের সঙ্গে থাকার অনুভূতি গুলো সত্যিই আলাদা। এখন এই প্রাণীদের সংখ্যা কমছে। আমার অনেক ভাগ্যবান যে ওদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে পেরেছি।
তোমাকে দর্শক কি কি কাজে পাচ্ছে?
সামনে তিন চারটে কাজ আসছে। ‘অপরাধী’। সামনেই পাবেন শেষ চিঠি, আর সাইলেন্স সিগনেচার।
তুমি কোন জাদু করেছো, যেটা সবাইকে সকলকে শেখাতে চাইবে?
“হার্ডওয়ার্ক” । এই জাদুতে জেতার স্বাদ আর কিছুতে নেই। একটা ঘটনা বলি। একবার পরীক্ষায় খুব খারাপ রেজাল্ট হয়েছিল। মা খুব কষ্ট পায়। বলেছিল, এই লাল কালি পেলি! আমার তাই দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ভেবেছিলাম মাকে খুশি করতেই হবে। পড়াশোনা শুরু করলাম মন দিয়ে। তাতে বেশ ভালো ফল পেলাম। সেইদিন মনে হয়েছিল কষ্ট করে জেতা এই ম্যাজিকের থেকে ভালো করে ম্যজিক হয় না। এই ম্যাজিকটা দেখাতে গিয়ে যে জীবনে কত কিছু পেলাম, তা বলে বোঝাতে পারবো না।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তুমি কোন ম্যাজিক করবে?
মানুষের মনে এই হিংস্রতা। সবার আগে এটা ম্যাজিক করে পালটাতাম। যেভাবে দিন চলছে তাতে নমনীয়তা হারাচ্ছে সমাজ থেকে। ছেলে বড় নাকি মেয়েরা, এই যুদ্ধটা মানুষের ক্ষতি করছে। আর এই ম্যাজিকটা আমি একা নই, সকলকে করতে হবে। আমাদের সকলকে প্রতিদিন একটা করে ভালো কাজ করতে হবে। একটা করে গাছ লাগাবো, রাস্তায় কোন বাচ্চা কে খাওয়ালাম। বাবা বলেছেন “সেই বড় ম্যাজিশিয়ান হবে, যিনি সকলের দুঃখ, কষ্ট কমাতে পারবেন”।
ছবি – সুস্মিতা সাহা
Facebook Comments