ক্রমাগত ‘চাপ ও ক্ষোভের’ কারণে ইসকনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর দেশে তোলপাড় চলছে। অনেক জায়গায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে বুধবার বাংলাদেশ হাইকোর্টে মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক হয়।
চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও ইসকনের প্রতিবাদ
চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর বাংলাদেশে ইসকন সমর্থকদের বিক্ষোভ শুরু হয়, যার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা। তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এদিকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করে চট্টগ্রাম ও রংপুরে জরুরি অবস্থা জারির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
হাইকোর্টের রায়
‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে, পিটিআই জানিয়েছে যে যেহেতু সরকার ইতিমধ্যে ইসকনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইসকনকে যে কোনও উপায়ে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অর্ডার করতে অস্বীকার করেছে। ফলে ইসকনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ হয়ে যায়। আদালত ইসকনের বর্তমান কার্যক্রমের বিষয়ে সরকারকে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা জানাতেও বলেছে।
শ্রবণ বিবরণ
‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মেহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করে। আদালত সুস্পষ্টভাবে বলেছে, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
ইসকনের প্রতিক্রিয়া
ইসকন কলকাতা শাখার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাধারমন দাস বলেন, “এটা আমাদের জন্য খুশির খবর। ইসকনকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল, যার কারণে আমরা চিন্তিত ছিলাম। কোথায় যাবে লাখো ভক্ত? অনেক মন্দির আছে। সরকারের এই প্রচেষ্টা হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।
চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের ভূমিকা ও ঘটনা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংগঠন মিলে ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’ গঠন করে। ফোরামের মুখপাত্র নির্বাচিত হন চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তার আবেদনে ঢাকার শহীদ মিনার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার সংখ্যালঘু মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেয়। চট্টগ্রামে বিক্ষোভের পর স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের পর সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারের পর, তার মুক্তির দাবিতে ইসকন সমর্থকদের বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার তার আদালতে উপস্থিতির সময়, তার সমর্থক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ হয়, যার ফলে একজন আইনজীবী নিহত হয়।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং বর্তমান পরিস্থিতি
৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় উপাসনালয় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তবে ইউনূস বারবার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন।
Facebook Comments