ঘরে রয়েছেন বৃদ্ধ মানুষ। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। কিছুতেই ডেকেও সারা পাওয়া যাচ্ছেনা। বয়স হয়ে গিয়েছে। কিছু হল না তো! এই চিন্তা নিয়ে দরজার ভাঙার কথা ভাবা হচ্ছে। এমন সময় বিলে বলল, “আরে দরজা ভেঙো না। ওপর থেকে হাত দিলেই তো দরজা খুলতে পারবো। মনে নেই মিশনের নিয়ম!” এরপর ঘরের ভিতরে ঢুকে বোঝা গেল বয়স্ক মানুষটি “কানে মেশিন” দিতেই ভুলে গেছেন। শুরু বিলের ডায়েরির পাতা খোলা।
“বিনা অনুমতিতে বাহির নিষেধ”। এটা দেখলেই মনে আসে অনেক কৌতূহল। কেন যাওয়া যাবে না? কি হবে ভিতরে? “বিলের ডায়েরি” এমন একটি সিনেমা যার মধ্যেও আছে তেমন টান। প্রত্যেক মুহূর্তে মনে হবে কি আছে এর শেষে।
বিশাক্ত বিষে ভালোবেসে ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করবে। ভালো বাসা মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে, তা বোঝা যায়। ছোটদের মন ছোটদের মতই হয়।
বাবা মা কে ছেড়ে অনেক দূরে বড় হতে হয় অনেককেই। সেই রকম এক মিশনে বড় হচ্ছে একদল কচিকাঁচা। সন্তান রেখে ফেরার সময় মায়ের মনের যন্ত্রণাও বেড়িয়ে আসছে এই ছবিতে। কারোর আবার হোস্টেলে আসার কারন মনে পরতেই গুমরিয়ে ওঠা। তারই মধ্যে একজন একটু অন্যরকম। রাতে যখন সকলে ঘুমিয়ে পরে ঘুম আসেনা তার। ঘুম আসে ভোরের দিকে। চোখে নেমে আসে স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্নটা একই জায়গায় শুরু আর একই জায়গায় শেষ। কে আসে সেই স্বপ্নে? কি এমন স্বপ্ন যার জন্য ভয় পেতে হয়। আর যে ডায়েরিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাতেই বা কি আছে? কি লেখা আছে এই ডায়েরিতে? বিলেই বা কে? কি করতে চায়? এক রহস্যের ঘেরা টোপে সামনে আসছে ওই মিশনে।
স্কুল জীবন কাটিয়ে এসেছি বহুদিন। একসঙ্গে কাটানো সময়, একসঙ্গে পড়া, আবার কখনও বন্ধুর শরীর খারাপে তার পাশে দাঁড়ানো। আর যদি কখনও দেখেছি বন্ধুর সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে হাতে হাতে দিয়ে এগিয়ে গেছি। বিশ্বরূপ বিশ্বাস তৈরি করেছেন এমন একটি সিনেমা যাকে মাপা যাবেনা মাপকাঠিতে। আড়াই ঘণ্টার জার্নি আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার ছোটবেলায়। শুধু স্মৃতি নয় “বিলের ডায়েরি” শেখাবে মনুষ্যত্ব। শেখাবে একসঙ্গে বাঁচার লড়াই।
ছোটবেলাটা মনে পড়ে নিশ্চয়? আচ্ছা মনে পড়ে সন্ধ্যে বেলায় পড়তে বসেছি, আর ঠিক তখনই লাইট অফ। মা জ্বালিয়ে দিল মোমবাতি, আর বলল পড়তে বস। বই হাতে তুলে নেওয়ার ফাঁকে ঠিক দেখতে পেতাম মোমবাতির দিকে লাইন করে আসছে পিঁপড়ের দল। মাথায় এসে গেল বুদ্ধি। একটা পিঁপড়েকে তুলে একটা কিছুর মধ্যে ভরে, দেখতাম কি করে এবার সে। আবার কখনও পুকুর পারে বসে একটা ঢিল নিয়ে নজর রাখা ব্যাঙের উপর, যেই না একটা কোথাও এসে বসল ওমনি টার্গেট সেট। মনে পড়ে গেল তো ছোটবেলা? একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। বড় হয়ে পাড়ি দেওয়া নিজের জগতে। আবার বহু বছর পর সবাই একজায়গায় এসে আরও একবার ঢুঁ মারা স্মৃতিতে। যেখানে কানু মহারাজ শেখাচ্ছেন ” প্রাণী হত্যা করো না।” আর সেখানেই রূপঙ্কর বাগচি বলছেন “এক খান ঢিল খেলে পড়ে যাবে উড়ে ওর প্রান ভোমরা”।
বাংলা সিনেমাতে বহুদিন ছোটদের নিয়ে কিছু হয়নি। সেই না পাওয়াকে একেবারে মুছে দিলেন বিশ্বরূপ বিশ্বাস। অনাবিল এর তার ছোটবেলা কাটিয়েছে আশ্রমে। অনাবিল থেকে বিলে হয়ে যায় এখানেই। ছোট থেকে বড় হওয়া। প্রত্যেকে মুহূর্তে আসে বাঁধা। পথে চলতে গিয়ে বন্ধুকে পাশে পেয়েই যায়। বিলেও পেয়ে যায় তার পথের সঙ্গীকে। কানু মহারাজ আশ্রমে এসে শেখান একসঙ্গে থাকতে।
ছবিতে গান ব্যবহার করা হয়েছে সুন্দর করে। এক নিমিশে ফিরে যাওয়া সত্যজিৎ রায়ের সময়ে। তবে ক্যামেরার কাজ আরও কিছুটা ভালো হলে ভালো লাগত। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হয়েছে। যেখানে অতীত আর বর্তমান একসঙ্গে।
শুধু স্ক্রিপ্ট নয়, অসাধারণ গান। সময় মতো হাসির উচ্ছ্বাস। বিশ্বনাথ বসু, সমদর্শী দত্ত নিজের কাজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। এই ছবিতে যারা জুনিয়ার অ্যাক্টর তাদের অভিনয় একেবারেই ছোটদের নয়। তাদের মুখে ডায়লগ শুনে সব কিছু ভুলে আপনি হাসবেনই। বোর্ডিং দেওয়ার কারন হিসেবে যা জানা যায়, ” আমি জানি কেন আমাকে এখানে পাঠানো হল! বাবা বারবার বলত তিনজনে এই এক বিছানায় হয় না।” বড় হয়ে যদি আরও একবার ছোটবেলায় ফিরে যেতে চান। দেখে নিন “বিলের ডায়েরি”।
Photo – Rainak Dutta
Facebook Comments