অনিন্দিতা সরকার। দীর্ঘদিন ধরে বাংলা ধারাবাহিকের এক অত্যন্ত পরিচিত মুখ। অনেক মেগা সিরিয়ালে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। এক সময় থিয়েটার করেছেন চুটিয়ে। কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিও’তেও। তবে প্রথম কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন একজন অ্যাঙ্কর হিসেবে। সেখান থেকে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার লড়াই থেকে শুরু করে মুম্বাইতে গিয়ে কাজ করার ইচ্ছে, স্বপ্নের চরিত্র থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনের তার সাথে সম্পর্ক, সবকিছু নিয়ে What’s New Life এর সামনে অকপট অনিন্দিতা।
১. অভিনয় জগতে আসার কথা কবে থেকে ভাবছো?
অনিন্দিতা- আসলে ছোট থেকেই বাড়িতে গান বাজনার একটা পরিবেশ ছিল। তাই ছোট থেকেই নাচ, গান, অভিনয়ের সাথেই বেড়ে ওঠা। অভিনয়ের ইচ্ছেটা ছোট থেকেই ছিল। কিন্তু অভিনয় করার খুব সিরিয়াস ইচ্ছে ছিল না। হয়তো অন্য কোন প্রফেশনে যেতাম। কিন্তু ওই যে বলেনা, মানুষের ডেস্টিনি মানুষকে সেই দিকে টেনে নিয়ে আসে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। থিয়েটার করতাম খুব সিরিয়াস ভাবে। অভিনয় করতে অবশ্যই ভালো লাগে। কেননা আমার রক্তে ওই জিনিসটা আছে। বাবা নিজের প্রফেশনের বাইরেও থিয়েটার করতেন। আমার দাদা’রাও ভীষণ ভাবে সংস্কৃতির সাথে যুক্ত। আমি আমার স্কুলের সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকতাম। স্কুলের সমস্ত অনুস্থানেই গান গাওয়া বা নাচের জন্য আমার ডাক আসত।
২. কেরিয়ার শুরুর সময় কোনটা?
আমি তো অনেক দিন ধরেই থিয়েটারে কাজ করছি তাই থিয়েটারের সূত্রে টুকটাক কাজ আসছিল। আমি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কাজ করতাম। গ্রুপ থিয়েটারের সৌজন্যেও বেশ কিছু কাজের অফার আসছিল। তবে আমি কিন্তু প্রথম অফার পাই অ্যাঙ্কারিং-এর। ভালো কথা বলত পারতাম বলেই অ্যাঙ্কারিং-এর জন্য ডাক আসে। আমাকে একটা রিয়েলিটি শো’এর প্রোমোর জন্য ডাকা হয়। পরে আমাকে অ্যাঙ্কারিং অফার করা হয়।
৩. প্রথম সিরিয়াল হিট। তারপরে আবার নতুন করে কাজের চেষ্টা। একবার সাফল্যের পর আবার নতুন করে স্ট্রাগলের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অনিন্দিতা- আমার সবসময় মনে হয় যে, শিল্পীদের জীবনে কোন নিশ্চয়তা নেই। আসলে আমরা তো চাকুরীজীবী নই। আমাদের একটা করে প্রোজেক্ট শেষ হয়, আবার একটা করে নতুন লড়াই শেষ হয়। আমাদের প্রত্যেকটা প্রোজেক্টেই লড়াই করতে হয়। দেখো, প্রথম সিরিয়াল হিটের একটা চাপ থাকে। সেটা সবার ক্ষেত্রেই। তবে আমি নিজেকে ভীষণ লাকি মনে করি কারণ, আমি এতদিন যেই সমস্ত সিরিয়ালে চরিত্র করেছি সেই সমস্ত চরিত্রকেই মানুষ ভালবেসেছে। সেটা যদি কোন ক্যামিও চরিত্রও হয় তাও মানুষ আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে তোমাকে প্রত্যেকদিন লড়াই করতে হবে। সাথে পাল্লা দিয়ে ভালো কাজ করতে হবে। প্রতিদিন নিজেকে প্রমাণ করতে হয় এখানে।
৪. তোমার নতুন কি কাজ মানুষ দেখতে চলেছে?
অনিন্দিতা- বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম করলাম সম্প্রতি। সেগুলোর খুবই ভালো রেসপন্স পেয়েছি। আসলে আমি তো সিরিয়ালের জগৎ থেকে এসেছি, তাই সিনেমার জগতে আস্তে আস্তে আমাকে ঢুকতে হচ্ছে। আমার নিজের পি.আর খুবই খারাপ। এখন চেষ্টা করছি নিজের পি.আর ভালো করার। লোকজন আস্তে আস্তে আমাকে চিনছে। আসলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে এক একটা দল কাজ করে। তারা নিজেদের মধ্যেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ করে। সেখানে আমি একজন বাইরের লোক হয়ে তো সহজেই সেই দলের মধ্যে ঢুকে যেতে পারিনা। যেদিন তা পারবো, সেদিন হয়তো অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারব। আমার সবসময়েই ভালো কাজ করার একটা খিদে রয়েছে। আর আমার মনে হয় আমি কাউকে নিরাশ করব না।
৫. কোন স্বপ্নের চরিত্র রয়েছে?
অনিন্দিতা- দেখো, আমাদের তো সবরকম কাজই করতে হয়। কিন্তু আমি এমন কিছু কাজ করতে চাই যেগুলো করে আমি মন থেকে খুব আনন্দিত হব। তবে আমি চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে বেশি ভালোবাসি।
৬. কোন কোন পরিচালকদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে?
অনিন্দিতা- আমার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাজ খুব ভালো লাগে। আর একজনের কাজ আমার খুব ভালো লাগত। তিনি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ওনার সাথে কাজ করার ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেল। এছাড়াও সৃজিতের কাজ ভালো লাগে। খুব ইচ্ছে রয়েছে অপর্ণা সেনের সাথে কাজ করার। জানিনা কবে পূর্ণ হবে এই আশা।
৭. মুম্বাইতে গিয়ে কাজ করার কোন ইচ্ছে রয়েছে?
অনিন্দিতা- এটা আমার কাছে পুরনো। আমি যখন সবে মাত্র আমার কেরিয়ার শুরু করছি তখন মুম্বাইয়ের দুটি বড় হাউস থেকে সিরিয়ালের অফার আসে। তিন বছরের চুক্তি ছিল। কিন্তু আমার সমস্যা হল আমি খুব বেশিদিন বাড়ি বা এই শহর ছেড়ে থাকতে পারি না। বিদেশে ঘুরতে গিয়েও এই শহরটাকে ভীষণ ভাবে মিস করি। তাই তখন সেই অফার ফিরিয়ে দিই। তবে মুম্বাইতে আমি কিছু অ্যাডের কাজ করেছি। তাই কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে ওখানের কাজের। এখানের থেকে মুম্বাইয়ের কাজের ধরণ অনেক আলাদা। অনেক প্রফেশনাল মুম্বাই। মুম্বাইতে গিয়ে এই মুহূর্তে কোন সিরিয়ালের কাজ করার ইচ্ছে নেই। তবে কোন ছবি বা অল্প সময়ের জন্য যদি কিছুর অফার পাই, তাহলে অবশ্যই করবো।
৮. এই ইন্ডাস্ট্রিতে কোন নায়কের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে?
অনিন্দিতা- এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। কিন্তু সত্যি কথা হল তাদের কারোর সাথেই আমার সম্পর্কটা প্রেমের নয়। হ্যাঁ, ছোটবেলায় বেশ কিছু ক্রাশ ছিল। ওই সময় যা হয় আর কি। সব কিছুই বেশ ভালো লাগে। আমারও তাই হয়েছিল। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির কারোর প্রেমে পড়িনি কখনো।
টলিউডের এই প্রজন্মের অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীই মুম্বাইতে গিয়ে কাজের সুযোগ খোঁজে, সেই জায়গায় কেরিয়ারের শুরুতেই মুম্বাইয়ের দুটি বড় হাউসের ধারাবাহিকের কাজ হেলায় ছেড়েছেন অনিন্দিতা। যেটা সচরাচর সবাই করতে পারে না। আর এখানেই ব্যতিক্রমী অনিন্দিতা। জানিয়ে রাখলেন, ভালো কাজ করতে চাই অবশ্যই। তার জন্য কিছুদিন মুম্বাই গিয়ে কাজ করতেই পারি। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য পারব না। অনিন্দিতার এক কথা, আমি আরও অনেক ভালো কাজ করতে চাই। যেগুলো মানুষ অনেকদিন ধরে মনে রাখবে। আপাতত সেই লক্ষেই কাজ করে চলেছেন অনিন্দিতা। তার এই যাত্রাতে What’s New Life এর পক্ষ থেকেও রইল অনেক শুভেচ্ছা।
Facebook Comments