সামনে তোমার কোন কাজ পাচ্ছে দর্শক?
একটা একদম অন্যরকম কাজ করছি। ছবির নাম চেগু। পাভেল এর সঙ্গে কাজ। ডিরেক্টর নবমিতা। ১০/১২ বছরের বাচ্চা ছেলের গল্পও। একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে অভাব অনটনের মধ্যে বড় হতে থাকে ঐ বাচ্চা ছেলে। নিম্নবিত্ত বাচ্চারা খুব টাড়টারই বড় হয়ে যায়। অনেক কিছু তাড়াতাড়ি শিখে যেতে হয়। টাকা- পয়সা, অভাব- অনটন বেশ কইছি জিনিস শিখিয়ে দেয়। ঘটনাচক্রে চে গুয়েভারাকে আইডল ভাবতে শুরু করে এই বাচ্চাটি। খুব যে চেনে সে তা নয়। কিছু ছবি দেখেছে। কখনও মিছিলে, কখনও বা টি শার্টএ। টুপি পড়া একটা মানুষ। যেহেতু এই মানুষটি চুরুট খেত, বাচ্চাটিও শুরু করল চুরুট খেতে। কিন্তু তখনও সে জানে না কে চে গুয়েভারা।
পয়সার অভাবে বড় হচ্ছে এই বাচ্চা তখন হঠাৎ করেই মিল পেতে থাকে তাঁর সঙ্গে। পিছিয়ে পড়া জীবনে ফিরে পায় নিজের শক্তি। ঘুরে দাঁড়ায় সে। একদম অন্য রকম ছবি।
চেগুতে তোমায় কি ভাবে পাওয়া যাবে?
আগেই বললাম এই ছবির গল্পও। ধাপে ধাপে নিজেকে বড় করার গল্পও। আমি এই ছবিতে বাচ্চাটির মা। বাংলা ছবিতে এই প্রথম অভিনয় করছেন বিনয় পাঠক। এই প্রথমবার কোন আঞ্চলিক ছবিতে দেখতে পাওয়া যাবে তাঁকে। এটা আমার জন্য খুব ভালো খবর। যত ভালো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করব তত নিজের অভিনয়ের দক্ষতা বাড়তে থাকে।
স্ট্রাগল এই শব্দটা তোমার জীবনে আজও কি প্রভাব ফেলে?
দেখ, ফ্রিলান্সার অভিনেতারা সব সময় স্ট্রাগল করে। মরগ্যান ফ্রিম্যান নামে একজন অভিনেতা আছে হলিউডে। তিনি বলেছিলেন একজন অ্যাক্টরের কাজ হল পরের কাজ খোঁজা। চেগু নিয়ে কাজ করছি, চেগু শেষ হয়ে গেলে প্রের কাজ কি হবে তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা শুরু হয়ে গেছে। কারণ আমি চাকরি করিনা, আমি মাস মাইনা পাইনা। অভিনেতা অভিনেত্রী পিছনে একটা ট্যাগ লেগেই ঠাকে।ও এই চরিত্রে অভিনয় করে, ওকে এতে মানাবে। কলকাতায় এক্সপেরিমেন্ট করার জায়গা নেই। কেউ বেশি এক্সপেরিমেন্ট করতেই চায়না। টাই এই ভাবেই স্ট্রাগল চলতে থাকে। তবে স্ট্রাগল একদিক থেকে হয়না। জীবনের প্রত্যেক ধাপেই এই শব্দটাকে বয়ে নিয়ে চলতে হয়। যেহেতু এটাই আমার পেশা, টাই টাকার চিন্তাটা আসেই। কারণ বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রি তে বাজেট কমছে। যে কোন ছবির আলোচনার প্রথম কথাই “আমাদের ছবির বাজেট কম”। আজ পর্যন্ত শুনিনি কেউ বলেছে “আমাদের অনেক বাজেট”। সেটাও একটা স্ট্রাগল। তারপর বাড়ি আছে, বেক্তিগত জীবন আছে। হাসি, কান্না, রাগ, অভিমান, দুঃখ সব আছে। একটা ক্রিয়েটিভ কাজের পিছনে অনেক কিছু থাকে। আমার বেক্তিগত জীবনে যাই হোক নাক কেন কাজের ক্ষেত্রে তা প্রকাশ পেলে চলবে না। আর এতদিন কাজ করার সুবাদে দর্শক দের একটা ভাবনা হয়ে গেছে, আমি যখন আছে তখন ছবির স্ট্যান্ডার্ড এই হবে। খুব যে কিছু ভেবে চিন্তে করি এমনটা নয়। হয়ে গেছে, তাই এখন কাজে হ্যাঁ করার আগে এই ছবিতে দর্শকদের এক্সপেকটেশন ঠিক রাখতে পারবো তো! এটা মাথায় আসে। নয়ত বাংলা ছবি কতই তো তৈরি হচ্ছে। প্রায়ই প্রতিদিনই নতুন ছবির কথা শুরু হচ্ছে। এটাও মস্ত বড় স্ট্রাগল।
কলকাতায় বাংলা ছবির অবস্থা কি রকম বলে মনে হয়?
এখন ছবি বানানটা যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, চারিদিক থেকেই ছবি বানানো হচ্ছে। আর যদি ফিচার ফিল্ম হয় তাহলে একে কলকাতায় এনে ফেলতে হয়। যে কোন ভাবে ছবি তৈরির প্রসেস কে কলকাতায় নিয়ে আস্তে হয়। ইনফাস্ট্রাকচার অনেক বেশি। টেকনোলজি অনেক উন্নত। তবে এখন মফরসলের ছেলে মেয়েরাও প্রচুর শর্ট ফিল্ম করছে। সেই দিক থেকে দেখতে হলে বাংলা ছবি অনেক হচ্ছে। এই যে “ডুব” তৈরি হয়েছে। এটাতো বাংলা ছবি। আমার দেখে গর্ব হয়। পার্নো ইরফান খানের সঙ্গে পাঠ করছে। ভালো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি। তবে খারাপ ভালো কথা গুলো ভীষণ আপেক্ষিক। অনেক সময়ই হয় কোন একটা ছবি দেখে রিভিউ এর রেজাল্ট খুব খারাপ। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবির জন্য কত কমেন্ট, তাহলে ভালো, খারাপ এই কথা গুলো কি ভাবে আসে!
তুমি “সহজ পাঠের গপ্পো ” দেখে বলেছিলে এটা সকলের দেখা উচিত, সমর্থন করা উচিত। আজ টলিউড ইন্ডাস্ট্রি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে শো টাইমের জায়গা করে দিয়েছে, কি বলবে?
শুধু বলব এটা অনেক আগে হওয়া উচিত ছিল। আমরা বাংলা ছবি করি কিন্তু সব বাংলা ছবির খোঁজ রাখিনা। আমরা যদি শুরু থেকেই এই খবর নিতাম, তাহলে ভালো ঘটনাই আরও আগে ঘটত।
মা, সুদিপ্তা আর অভিনেত্রী সুদিপ্তা কি ভাবে সব কিছু একসঙ্গে সামলায়?
হয়েই যায়। এই যে মা মেয়েকে রেডি করে বাইরে বের করল, আর এখন অভিনেত্রী সুদিপ্তা বসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। তবে যখন কাজের জন্য বেরোই, ও তো সব কথা বলতে পারে না কিন্তু মা বলে কাঁদতে থাকে। তখন ও কে “পাখি” “ভউ” দেখতে বারান্দায় নিয়ে যাওয়া হয় আর আমি পালিয়ে যাই।
বিগ বসে গিয়েছিলে, অভিজ্ঞতা কেমন? সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে?
আমি একমাত্র বোধহয় মানুষ, যে বিগ বসে কিছু না জেনে গিয়েছিল। তবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আবার অনেকর সঙ্গে ওখানে গিয়ে আলাপ হয়, বরং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। অনেকের সঙ্গে কাজের সূত্রে দেখা হয়েই যায়, তবে সব ঘটনা মনে নেই। কিন্তু দু একটা ঘটনা যা আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না। তবে এমনটা নয় যে তারা অপরিচিত। এগুলো এক্সপেক্টেড ছিল। কারন তাদেরকে আগের থেকেই চিনতাম।
তোমার কাছে যদি বিগ বসে যাওয়ার সুযোগ হয়, আবার যাবে?
যদি আগের থেকে বেশি টাকা দেওয়া হয় যাবো আবার বিগ বসে। এখন ব্যাপারটা বুঝে গেছি । আমার যাওয়ার দুটো কারন ছিল। এক, সেই সময় আমার কোন কাজ ছিলনা। দুই, যে টাকা ওরা অফার করেছিল কলকাতার বাজারে কেউ অফার করবে না।
আমার যথেষ্ট কারন ছিল হ্যাঁ বলার জন্য। কারণ ওরা জানত এর আগে কোন রিয়্যালিটি শো তে যাইনি সেই সময় ওদের হ্যাঁ করেছিলাম কারণ ততদিনে আমি কয়েকটা নন ফিকশন শো বানিয়েছি। ক্যামেরার পিছনে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল কিন্তু এটা একদম আলাদা। আমি শিখতেও চেয়েছিলাম কি করে এই শোয়ের কাজ হয়। আমি জানতে চেয়েছিলাম ক্যামেরার পিছনে এখানে সত্যি কি হয়? কি করে এটা সম্ভব হচ্ছে।
তুমি বাঙাল না ঘটি?
আমি ঘটি, আমার শ্বশুরবাড়ি বাঙাল। খুব একটা পার্থক্য দেখিনা। ভাষার কিছু পার্থক্য আছে। রাতে শাশুড়ি মা যখন ফোন করেন, তখন বলেন “খাইসো? সোনা ঘুমাইসে?” এটা বেশ মজার লাগে। আর রান্নায় স্বাদের কিছু তফাৎ আছে।
খেলা দেখা হয়?
না, একদম হয় না। আর এখন তো আমি সময় পাইনা মেয়ের জন্য। আমি যদি চা খেয়েও রাখি তাহলে আরেকজন কাপটা তানবে। যা ছে সব উপরে তুলে রাখি। কত তালা চাবি দেব? কাল তালা না দিয়ে বেড়িয়ে গেছিলাম, ফিরে দেখি আমার মেয়ে সব বের করে রেখেছে। আমি আসতেই ও বলল “মা দেখো”। আবার টেনে নিয়ে গিয়ে দেখাচ্ছে। ড্রেসিং টেবিল শেষ। লিপস্টিক, হেয়ার ড্রায়ার সব শেষ।
(ছবি- কোয়েল পাল সিনহা)
Facebook Comments