আপনি ভাবছেন, এই তো দুর্গা পুজো শেষ হল, আবার ফ্যাশন নিয়ে এখন কী পড়ব? এই ধারণাটাই ভাঙার চেষ্টা করছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। আর তাছাড়া সামনেই দীপাবলী, ভাইফোঁটা, ক্রিসমাস, আরও কত কী! তাই বাঙালির ফ্যাশনটা যে সব ঋতুতেই সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে কার না ভাল লাগে বলুন। তাই উৎসবের মরসুমে ফ্যাশন নিয়ে আড্ডা জমল শর্বরী দত্তর সঙ্গে। ডেস্টিনেশন – স্টুডিয়ো শূন্য।
ডিজাইনার হিসাবে আপনি এই ভিড়ে আজও আলাদা কী করে?
শর্বরী দত্তের কথায়, “সেটা তো আমি আলাদা করি নি, আমার কাজ আর ক্রেতারা তৈরি করেছেন। তাছাড়া আমি তো ট্রেন্ড ফলো করি না, আমি ট্রেন্ড তৈরি করি। ১৯৯১-তে যখন ভারতীয় পুরুষদের জন্য ট্র্যাডিশনাল বা এথনিক পোষাক বানাতে শুরু করেছিলাম, সবাই ভাবতেন পুরুষরা ফ্যাশনের ধারেকাছেও নেই। আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে। ডিজাইনার ওয়্যার বলতে পূর্বাঞ্চলের কোনও ধারণাই ছিল না, এমনকী আমিও জানতাম না যে ডিজাইনারের কাজ করছি। আসলে পেশাই আমাকে বেছে নিয়েছে।”
আজও শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য কেউ কাজ করেন না, দীর্ঘ এত বছর ধরে তিনি তা করেছেন, এটা নিজেই একটা ট্রেন্ড। ইজিপশিয়ান এবং অন্যান্য আফ্রিকান লোকসংস্কৃতি, মধুবনী, যামিনী রায় এবং আরও বহু ভারতীয় সংস্কৃতিকে পুরুষদের ফ্যাশনের সঙ্গে জুড়েছেন তিনি। আজ যে এই সমস্ত ডিজাইন ট্র্যাডিশনাল পোশাকে ট্রেন্ডিং, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। আর যদি মাথায় আসে রঙিন ধুতি? শর্বরী দত্তের হাত ধরেই তা এল ফ্যাশন জগতে। ১৯৯৬-তে অল মেল র্যাম্প শো-তে নীল, সবুজ, কালো, হলুদ ধুতি প্রকাশ্যে এল। বদলে যেতে থাকল ফ্যাশনের সংজ্ঞা।
তিনি বলেন, “আমি তো নতুন কিছু করি নি। সেই কারণেই আমায় বলা হয় রিভাইভালিস্ট ডিজাইনার। যা কিছু ঐতিহ্য, সেগুলোকে ড্রামা বা ছবি থেকে বাস্তব জীবনে এনেছি, এটুকুই।”
এবছর উৎসবের ফ্যাশন কতটা বদলেছে?
শর্বরী বললেন, “বছর বছর কিন্তু ফ্যাশন বদলায় না। ফ্যাশনের পরিবর্তন ভীষণ শ্লথ। দু’রকমভাবে ফ্যাশনের গতি বদলায়, একটা লিনিয়ার – মানে একটা ফ্যাশন আসছে, আবার সেটা চলে গিয়ে নতুন আসছে। আর একটা ধরন হল চক্ররেখায়, যা ২০-২৫ বছর পরপর ফিরে আসে। আমাদের হাল ফ্যাশন আসে বিপণনের ওপর ভিত্তি করে। আসলে সেটা নতুন নয়, যেটা বিক্রি হয় সেটাকে ফ্যাশন তৈরি করা হয়। আর চলচ্চিত্র এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।”
আজকাল ফ্যাশন আর দামী নয়, বিক্রির স্বার্থে ‘প্রেত’ কালেকশন তৈরি হচ্ছে, যা সকলেরই সাধ্যের মধ্যে। আর ডিজাইনাররা পরার যোগ্য এবং সাধারণের পকেটের সাইজ অনুযায়ীই পোশাক তৈরি করছেন। মল ফ্যাশনের ট্রেন্ডে এখন প্রত্যেকেই স্মার্ট। ফ্যাশন এখন হাতের মুঠোয়, তাইতো প্যারিস, মিলানের মার্জার সরণী থেকে বেরিয়ে পোশাক পরিসরে এখন সবই গ্লোবাল ফ্যাশন।
Facebook Comments