আসাম রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সেন্টার ফর সাসটেইনেবল পলিমার বাঁশ, চালের মাড়, আখ প্রভৃতি উপকরণ থেকে প্লাস্টিক তৈরি করে অ্যাসিডে রূপান্তরিত করছে। র্যাঙ্কিংয়ের দিক থেকে ভারতে ২য় এবং বিশ্বে ৩৭তম। এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী অধ্যাপক বিমল কাটিয়ার দাবি করেন, এই প্রযুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। তবে বাঁশ থেকে শুধু সব ধরনের বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকই তৈরি হয় না। এছাড়াও অন্যান্য উপকরণ থেকে তৈরি করা যেতে পারে. উদাহরণস্বরূপ, এখানে যে পাতলা প্লাস্টিকটি দেখা যায় তা স্টার্চ (ভাতের মাড়) থেকে তৈরি। এটি স্টার্চকে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তরিত করে তৈরি করা হয়।’
পলিমার সংশ্লেষণ ও পলিমার বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, আমরা যখন এই প্লাস্টিককে ব্যবহারিক জীবনের শেষ দিকে ফেলে দিব, তখন ৯০ শতাংশ কার্বন কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত হবে। মাটিতে শোষিত হতে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন সময় লাগবে। আমরা সাধারণত যে প্লাস্টিক ব্যবহার করি তা মাটিতে দ্রবীভূত হতে তিন থেকে চারশ বছর সময় লাগে। কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক মাটিতে ফেললে তা মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা বাড়াবে এবং মাটিতে কার্বন সরবরাহ করবে। এটি এই ধরনের উপকরণের সবচেয়ে বড় সুবিধা।
তিনি আরও বলেন, এটি ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন। আমেরিকা ইতিমধ্যে এটি তৈরি করছে। বর্তমানে আমাদের প্ল্যাটের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন 100 কেজি। তিনি আরও বলেন যে আমেরিকা এখনও এটি জানাতে লড়াই করছে।
আইআইটি গুয়াহাটির রিসার্চ স্কলার কান্না মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার আমাদের ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষণার বিষয়। যদি এটি ব্যবহার করা হয় এবং ফেলে দেওয়া হয় তবে এটি প্রাকৃতিকভাবে কোন দূষণকারী পদার্থ তৈরি না করে মাটির সাথে মিশে যাবে। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক পলিমার ব্যবহারের ফলে মানবজাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই আমাদের সংস্থা বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার দিয়ে বাণিজ্যিক পলিমার প্রতিস্থাপন করে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক দিনের গবেষণার পর আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক ধরনের বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আমাদের কারখানায় এই পলিমার ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ তৈরি করেছি। যেমন কাপ, প্যাকেজিং ফিল্ম, প্লাস্টিকের প্লেট, বিভিন্ন ধরনের খেলনা—এসবই আমাদের ল্যাবে তৈরি হয়। কোনা বলেন, বাঁশ, ধানের তুষ বা শুকনো গাছ, আখ ইত্যাদি যাতে চিনি বা কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং অ্যাসিডে রূপান্তরিত হতে পারে তা আমাদের প্ল্যান্টের মাধ্যমে পলিমার বা প্লাস্টিক সামগ্রীতে তৈরি করা যেতে পারে।
এর উৎপাদন খরচ ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। পাইলটিং শুরু হয়েছে। শিগগিরই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারে। উৎপাদন খরচ শুরুতে একটু বেশি হলেও পরে কমে আসবে।
তিনি সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলকে এই প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, বায়ো-ডিগ্রেডেবল পলিমারের মাঠ পর্যায়ের উপাদান বাঁশ। গাছের মাধ্যমে এই বাঁশ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক আসে। উপজাত হিসাবে প্রাপ্ত সেই রাসায়নিক থেকে, রাসায়নিকের আরেকটি সিরিজ পাওয়া যায়। এবং তাদের কাছ থেকে অবশেষে ক্যাপ্রোল্যাকটোন পাওয়া যায়। এই ক্যাপ্রোল্যাকটোন পলিমারাইজ করার পরে, আমরা এই বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পাই।
Facebook Comments