অনিন্দ্য ব্যানার্জি। বাংলা সিনেমার অভিনেতা হিসেবে দর্শকদের কাছে অনেকদিন আগেই একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। একেরপর এক ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি পরিচালনাও করছেন। আর কিছুদিন পরেই মুক্তি পাবে তাঁর আগামী ছবি ‘কুয়াশা যখন’। এই ধরনের প্যারানরমাল গল্প নিয়ে বাংলা সিনেমায় আগে কোন ছবি হয়নি। এই ছবিতে নিজের চরিত্র থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলা সিনেমার হালহকীকত সবকিছু নিয়ে What’s New Life এর সামনে অকপট অনিন্দ্য।
‘কুয়াশা যখন’ ছবিতে তোমার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
অনিন্দ্য– বাংলা সিনেমাতে অভিনয় করার একটা আলাদা রকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখানে প্রত্যেকটা পরিচালকের সাথে কাজ করার একটা আলাদা রকম অনুভূতি রয়েছে। এই ছবি করার ক্ষেত্রে যেটা দেখলাম, দুই পরিচালক অভিষেক ও মীনাক্ষী এই ছবির গল্পটাকে নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছে। যেটা সচরাচর অন্য পরিচালকরা করেননা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন বাংলা সিনেমা হয় দক্ষিণ ভারতীয় ছবির রিমেক অথবা গোয়েন্দা আর নাহলে মানুষের রান্না ঘরে ঢোকার গল্প। কিন্তু এই গল্পটা সত্যিই অনেকরকম। এই ছবিটা এক কোটি টাকাও ব্যবসা করতে পারে আবার বক্স অফিসে মুখ থুবড়েও পড়তে পারে। আমি বেশিরভাগ সময়েই নিজের চরিত্র বুঝতে পারিনা। অনেক ক্ষেত্রেই কিছু না বুঝেই অনেক ছবিতে অভিনয় করে দিই। কিন্তু এই ছবিতে আমার চরিত্রটা শোনার পর আমি কিছুটা বুঝেছিলাম। এই চরিত্রটিকে সফল করতে গিয়ে আমাকে যথেষ্ট চাপে পড়তে হয়েছে। খুব কম চরিত্রই আমাকে চাপে ফেলতে পেরেছে।
এই ধরনের গল্প নিয়ে এর আগে কোন বাংলা সিনেমা হয়নি। সেটা নিয়ে কি বলবে?
অনিন্দ্য– বাংলা সিনেমা আসলে হ্যান্ডেল করতে পারবে না। কোন বিষয়ে ঠিকঠাক পড়াশোনা না থাকলে তো সেই বিষয়ে সাফল্য পাওয়া যায়না। এর আগে বাংলা সিনেমাতে অনেক ভুতের গল্প নিয়ে ছবি হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের গল্প একেবারেই প্রথম। অভিষেক ও মীনাক্ষী এই ছবিটাকে নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছে।
প্রথমবার স্ক্রিপ্টটা পড়ে তোমার কেমন অনুভূতি ছিল?
অনিন্দ্য– প্রথম কথা তো আমার টাকার দরকার ছিল। তাই কাজটা ফেরাতে চাইনি। অনেক লোন রয়েছে। তাছাড়াও গল্পটা বোঝার চেষ্টা করেছি। আরও একটা কথা হল যে এই দুই পরিচালকের অ্যাপ্রোচটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এই প্রথমবার কোন পরিচালক ডেকে বসিয়ে স্ক্রিপ্ট শুনিয়েছে। যেটা অনেক বড় বড় পরিচালক করেন না। তারা হয় বাড়িতে স্ক্রিপ্ট পৌঁছে দেন নতুবা একবার সকলকে ডেকে একসাথে বসিয়ে স্ক্রিপ্ট শুনিয়ে দেন। অভিষেক ও মীনাক্ষী কিন্তু এটা করেনি। ওরা আমাকে বারবার ডেকেছে। আমরা বারবার ছবি নিয়ে আলোচনায় বসেছি। আমি তো বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রায় ৯০ শতাংশ পরিচালকের সাথে কাজ করেছি, তাই বলতে পারি এটা অনেক পরিচালকই করেন না।
তুমি তো এই ছবিতে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছো। তোমার চরিত্রটা নিয়ে পাঠকদের কিছু বলবে?
অনিন্দ্য– দেখো প্রথমেই যেটা বলি, আমি যেই চরিত্রটিতে অভিনয় করছি সেটা আমার কাছে কখনোই নেগেটিভ নয়। ওটা দর্শকদের কাছে নেগেটিভ মনে হবে। মোদ্দা কথাটি হল, কে কোন জায়গা থেকে চরিত্রটি দেখছে। সেই জন্য নেগেটিভ আর পজিটিভ সম্বন্ধে আমার কোন স্পষ্ট ধারনা নেই। এই চরিত্রটি নিজের বায়োলজিক্যাল চাহিদা, মানসিক চাহিদা মেটাতে না পেরে বাইরে সেগুলো মেটানোর চেষ্টা করে। যেটা এই বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই করছে। যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে সমাজ তাকে খারাপ বলে। এই চরিত্রটিকে দুটি আলাদা সময়ে দেখা যাবে। এই চরিত্রটি নেগেটিভ দিকটা একটু আলাদা।
শ্যুটিং-এর সময়ে কোন মজাদার অভিজ্ঞতা?
অনিন্দ্য– প্রথমেই যেটা বলতে সেটা হল খাওয়াদাওয়া। শ্যুটিং এর সময়ে অসাধারণ খাওয়াদাওয়া করেছি। যেটা খুব মজার। আর একটা জিনিস হল অভিষেক ও মীনাক্ষীর ব্যবহার। সেটাও খাওয়াদাওয়ার মতোই মিষ্টি। ওদের সাথে কাজ করতে গিয়ে খুব কমফোর্টেবল ফিল করেছি। সেটা বোধহয় ওরাও এত ইয়ং বলে। খুব মিলেমিশে কাজ করেছি। এটা যদি ওরা ধরে রাখতে পারে তাহলে ওরা অনেকদূর যাবে।
এই সিনেমাটা যারা দেখবে তাদের কি আলাদা কিছু অনুভূতি হবে?
অনিন্দ্য– দেখুন বাংলা সিনেমার দর্শক কিন্তু নিত্যনতুন গল্প নিয়ে ছবি দেখতে ভালোবাসেন। এটা আমাদের ঐতিহ্য। কোন সিনেমা আমার ব্যক্তিগত ভাবে না পছন্দ হতে পারে, কিন্তু ভালো ব্যবসা তো করছে। আর এই ছবির গল্প নিয়ে তো কোন কথাই নেই। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হল এই ছবির গল্প দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। দর্শক যদি কিছু বুঝতে না পারে যে এই ছবিতে আলাদা কি রয়েছে তাহলে তারা হলমুখি হবে কীভাবে?
এই ধরনের গল্প নিয়ে হিন্দিতে অনেক সিনেমা হয়েছে। দর্শক সেই গল্প বাংলা সিনেমাতেও পছন্দ করবে?
অনিন্দ্য– যারা হিন্দি সিনেমা দেখেছন তারা বাংলা সিনেমাও দেখবে। হিন্দি সিনেমার সাথে এই সিনেমার কিছু পার্থক্য রয়েছে। হিন্দি সিনেমার রিচ অনেক বেশি। সেটা অস্বীকার করে লাভ নেই। আমাদের দরকার একটা অলটারনেটিভ দর্শক তৈরি করা। যারা হিন্দি সিনেমাতে এই গল্প দেখেছেন তারা বাংলা সিনেমাতে এই গল্প দেখবেন কিনা সেই আশায় বসে না থেকে আমাদের নিজস্ব দর্শক তৈরি করতে হবে। সিনেমাটা যাতে অনেক বেশি জায়গায় মুক্তি পায় যাতে অনেক বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলায় বসবাসকারী ভিনরাজ্যের মানুষরা বাংলা সিনেমা কতটা দেখেন বলে তোমার মনে হয়?
অনিন্দ্য– দেখো আমার মনে হয় যারা অনেক বছর ধরে বাংলায় বসবাস করছে তারা ওতপ্রোতভাবে বাংলার সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে গেছে। আমি নিজেই অসংখ্য উদাহরণ দেখেছি। ওরা যেমন সলমান খানের ছবি দেখতে যায় তেমন দেবের ছবিও দেখতে যায়। আসলে ওদের কাছেও তো দুটোই অপশন রয়েছে। হয় হিন্দি না হয় বাংলা। ইংরেজি সিনেমাতো আর আগের মতো আসে না। তাই আমার মনে হয় এখানে সেই পার্থক্যটা নেই। এখানে সবাই মিলেমিশেই থাকে। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। বাংলা ছবির কনটেন্ট এখন ইউনিভার্সাল হয়েছে। সেটা সব ধর্মের সমস্ত মানুষই দেখতে পারেন।
গত কয়েক বছরে বাংলা সিনেমার অবস্থা নিয়ে তুমি কি বলবে?
অনিন্দ্য– এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা খুব কঠিন। আমি শুধু এটাই বলব যে, প্রশ্ন করার অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে হবে। যেটা ধীরে ধীরে কমে আসছে। আমাদের কাছে সিনেমাটা শুধু মাত্র ভালো গল্প কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সিনেমাটা কিন্তু টা নয়। সিনেমাটা আর একটু সিরিয়াস ইস্যু। সিনেমার লক্ষটা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি।
তোমার ভক্তদের এই সিনেমা নিয়ে কি বলতে চাইবে?
অনিন্দ্য– আমার দর্শকরা আমাকে যেই চরিত্রে দেখতে অভ্যস্ত এখানেও সেই চরিত্রেই দেখবে। কিন্তু কিছুটা আলাদা রয়েছে। অনেক কুসংস্কার সম্বন্ধে মানুষ জানতে পারবে এই সিনেমাতে। আমার যারা দর্শক তারা তো আমার ছবি দেখবেনই। টেলিভিশন করার ফলে অনেক বয়স্ক মানুষও আমার কাজ ভালোবাসেন। তাদের কাছে আমার বক্তব্য, আপনারা যেমন আমার কাজ টেলিভিশনে দেখেন তেমন বড় পর্দাতেও দেখুন। এটাও এক অন্য রিয়েলিটি।
ইন্ডাস্ট্রিতে বরাবরই স্পষ্টবক্তা হিসেবে একটু দুর্নাম রয়েছে অনিন্দ্যর। সে কথা তিনি নিজেও স্বীকার করলেন। জানালেন, স্পষ্ট কথা স্পষ্ট ভাবে বলতে ভালোবাসি। তাতে কিছু লোকের খারাপ লাগলেও আমার কিছু করার নেই। আমার মধ্যে চিরকালই প্রশ্ন করার একটা স্বভাব রয়েছে। অনেকের সেটা পছন্দ নয়। ধীরে ধীরে মানুষের প্রশ্ন করার প্রবণতা কমে আসছে। কিন্তু, আমি এই প্রশ্ন করাটা জারি রাখতে চাই, জানালেন অনিন্দ্য।
ছবি- কোয়েল পাল
Facebook Comments