কেমন আছেন?
: আমি ভালো আছি। আশা করি আমরা সকলেই ভালো আছি।
আপনার প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম কী? কত সালে প্রকাশিত হয়?
: আমার লেখা প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম “মেঘ জড়ানো দিন”। গল্প সংকলন। প্রকাশিত হয়েছিল একুশে বইমেলা ২০০৮। প্রকাশ করেছিল মম প্রকাশ। এই বই ২০১৪ বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশন প্রকাশ করেছে।
আপনার জন্ম কোথায় এবং কতসালে?
: আমার জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৫ মে, চুয়াডাঙ্গা জেলায়। বেড়ে উঠেছি কুষ্টিয়া শহরে।
লেখালেখিতে কেন এলেন?
: নিজের ভাবনাগুলো প্রকাশ করার তাড়না মানুষের থাকে। আমারও আছে। সৃজনশীলতার বিভিন্ন ধারায় এক একজন নিজের ভাবনাগুলো প্রকাশ করেন। কেউ নাচেন, কেউ গান করেন, কেউ খেলেন, কেউ অভিনয়। আমি আমার কথাগুলো বলার জন্য লেখা বেছে নিয়েছি। কারণ লিখতে আমার ভালো লাগে। আমি লিখতে ভালোবাসি।
আপনার লেখালেখির পেছনে কার অবদান বেশি ?
: আমার লেখালেখির পেছনে পরিবেশ কাজ করেছে। দাদাকে দেখতাম হাতের কাছে এক টুকরো কাগজ পেলে তাতে কবিতা লিখে ফেলতেন। বাবা, চাচা, ফুপুরা গুছিয়ে লেখেন। আমাদের বাড়িতে আমরা নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ করি। ৩৭ বছর ধরে চলে আসছে। সেখানে আমরা পরিবারের সবাই লিখছি। প্রথমত পারিবারিক আবহের একটা অবদান আছে। আমি লিখে খসড়া কাগজ ফেলে দিলে মা সেটা তুলে রাখেন। বাবা নিয়মিত খোঁজ নেন আমি কী লিখছি। আমার লেখা জাতীয় পত্রিকাগুলো প্রকাশ করছে। আমি উৎসাহিত হচ্ছি। আমার লেখার পেছনে এইসব পত্রিকার অবদান আছে। আমার বন্ধুরা আমার লেখা পড়ে আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে, তাদের অবদান আছে। আমি যে বই পড়ি তাতে অনুপ্রাণিত হই লিখতে। আমার লেখালেখির পেছনে বইয়ের অবদান আছে।
বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই…
: বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। গভীর সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্য রচনা হচ্ছে বাংলাদেশে।
সাহিত্যের কোন শাখা নিয়ে আপনার লিখতে ভালো লাগে?
: আমি গদ্য লেখক। গল্প-উপন্যাস লিখতে ভালো লাগে। শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প-উপন্যাস লিখে বেশি আনন্দ পাই।
একজন লেখক হিসেবে আপনি কেমন বইমেলা প্রত্যাশা করেন?
: বইমেলাতে আমরা পছন্দের বই খুঁজে পেতে চাই। বইমেলা এমন হওয়া দরকার যেন পাঠক সহজেই সবগুলো প্রকাশনীর স্টলে যেতে পারেন এবং তার পছন্দের বই খুঁজে নিতে পারেন। বইমেলার সাজসজ্জা, গোছানো অর্থাৎ ব্যবস্থাপনার দিকটা এখানে বিশেষ জরুরি। শিশুদের ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। তাদের প্রয়োজনের ব্যাপারগুলো। অনেক মা আসেন দুগ্ধপোষ্য শিশু নিয়ে। সেই কথা মনে রাখতে হবে। মেলার মাঠে বসার ব্যবস্থা রাখা দরকার। অযাচিত ভিড় যেন মেলার উৎসবকে ম্লান করতে না পারে। এর আগে মেলার সময় বৃষ্টি হয়েছে। সেদিকটা মাথায় রাখতে হবে। আগুনের ব্যাপার। নিরাপত্তার ব্যাপার। এত মানুষ একত্রিত হবেন বইয়ের জন্য। তারা যাতে নিরাপদ বোধ করেন সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
শুধু বইমেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশনাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বই প্রকাশের ব্যাপারটা শুধু বইমেলা কেন্দ্রিক হওয়া উচিৎ নয়। আমরা সারাবছর লিখছি। সেই সমস্ত লেখা পত্রিকাতে প্রকাশিত হচ্ছে। বই বছরের যেকোনো সময় প্রকাশিত হতে পারে।
লেখক এবং প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
: লেখক এবং প্রকাশকের সম্পর্ক হবে পেশাদারী। লেখক বই লিখছেন, প্রকাশক সেই বই প্রকাশ করছেন। তাদের ভেতর চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হচ্ছে। তারা উভয়ে নিজেদের চুক্তির ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। কখনো যদি সেই চুক্তি মৌখিকও হয়।
নতুন লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
: লেখার জন্য প্রচুর পড়া দরকার। যারা লিখছেন আমি তাদের বলব অনেক বই পড়ুন। গদ্য। পদ্য, ইতিহাস, সমাজ গবেষণা সব রকমের বই পড়ুন। আর গভীরভাবে উপলব্ধি করুন। যুক্তি দিয়ে লেখাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলুন। যা লিখছেন তা নিজে অনুভব করুন ও বিশ্বাসের ভেতর নিয়ে আসুন।
আপনার পাঠকদের জন্য কিছু বলুন…
: ফেসবুকে লেখা লেখকদের স্ট্যাটাসের পাশাপাশি তাদের লেখা বই বেশি করে পড়ুন। আলোচনা করুন।
আপনার প্রিয় লেখকদের নাম বলুন
: ছোটবেলায় একটা ব্যাপারে খুব বিব্রত হতাম। কেউ কেউ জিগ্যেস করতেন, “কাকে বেশি ভালোবাসো, বাবাকে না মাকে?” দ্বন্দ্বে পড়ে যেতাম। আমি দুইজনকেই ভালোবাসি। প্রিয় লেখকের নাম বলা তেমনি কষ্টকর। হয়তো এমন কেউ আছেন যার লেখা এখনো পড়া হয়নি। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার প্রিয় লেখক হয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁর নামটি এখানে বলা হলো না। তবে কয়েকজনের নাম বলছি অন্যদের কৌতুহল মেটাতে। লেভ তলস্তয়, হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শওকত আলী, হাসান আজিজুল হক, মঈনুল আহসান সাবের, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরও অনেকে।
আপনাকে যদি আলাদিনের চেরাগ দেওয়া হয় তাহলে কী করবেন?
: চেরাগে ঘসা দেব। দৈত্য বের হয়ে আসবে। সে তিনটা হুকুম পালন করতে চাইবে। প্রথমে তাকে বলব, এমন ব্যবস্থা করে দাও যেন পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হয়। দ্বিতীয় আদেশ করব সেই দৈত্যকে দানব থেকে মানুষ হতে। আর তৃতীয় আদেশ থাকবে আলাদিনের চেরাগ ধ্বংস করে দিতে। যেন এরপর আর কেউ ঘসা দিয়ে এই অবস্থা বদলে দিতে না পারে।
ভবিষ্যতে দেশের জন্য কী করতে চান?
: শিশুদের জন্য মর্যাদাসম্পন্ন শ্রদ্ধাশীল নিরাপদ আবাস।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : রবিউল কমল
Facebook Comments