বাবা ভারতীয়, মা ব্রাজিলিয়ান। দুই সংস্কৃতিতে বড় হওয়া। বড় হওয়াটা কেমন ছিল?
সাউথ আমেরিকার বড় কন্টিনেন্ট তা হল ব্রাজিল। এশিয়ার কন্টিনেন্ট তা হল ভারত। তার মধ্যে একটা স্টেট “বেঙ্গল”। ব্রাজিলের মধ্যে একটা সিটি “রিও দে জেনেরিও”। তখনও বুঝতাম না, ভারত আর ব্রাজিলের মধ্যে এতটা টান। ফুটবল, খাওয়া, ভালবাসা সব মিলিয়ে প্রকৃতির যোগাযোগটা হয়ে যায়। আর তারপর হয় পরিবারের প্রভাব। এটা খুব দরকার। বাড়িতে কাদের সঙ্গে বড় হচ্ছি! বাড়ি থেকেই কিন্তু প্রথম শিক্ষাটা শুরু হয়। আমার ঠাকুমা ছিলেন বাঙালি। উনি ছিলেন কবিগুরুর শেষ ছাত্রী। উনি সাইকেল চালিয়ে মাছ কিনতে যেতেন, আর আমার ঠাকুরদা ব্রিটিশ যুগে পোস্ট মাষ্টার জেনারেল ছিলেন, টমটম গাড়ি করে বেরতেন। তিনি ঠাকুমাকে দেখতেন এই ভাবে। ওইখান থেকে ভালো লাগা। তারপর বিয়ে। এই ভাবে বাঙালি প্রভাবটা পড়ল। যেখানে চিকেন খাওয়া হত সেইখানে মাছ খাওয়া শুরু হল। তারপর বাবার বড় হওয়া। বাবা বিয়ে করলেন ব্রাজিলিয়ান। তারপর আমি। আর আমি পড়লাম দুজনের মধ্যে। নানি মা, আর দাদিমা। নানিমা পর্তুগীজ, স্প্যানিশ, ব্রাজিল। আর দাদিমা বাংলা। রিও দে জেনেরিওতে বসে হারমোনিয়ামে “ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল দ্বার খোল” শিখেছি। এই ভাবে শুরু। নানিমা দেখলেন দাদিমা জিতে যাচ্ছেন, উনি এলেন, শিখলাম “ আমোরে সিয়েতে কিয়েরো, কোমো, ইয়ে কোমো দন্দে”। এদের দুইজনের কম্পিটিশনে কার লাভ হল! আমার। এক কানে বাংলা। ভারতকে রিপ্রেজেন্ট করলাম। আর এক দিকে ব্রাজিলিয়ান।
তোমার ফুটবলের গান “ওলা ওলা ওলে”। ভাবনাটা কিভাবে এল?
২০১৪, অলিম্পিক রিও দে জেনেরিও। ভারত ব্রাজিলে। কি করব ভাবতে ভাবতে গান বানালাম “ওলা ওলা ওলে” মানে “হ্যালো হ্যালো ভিক্টরি”। ভারতকে সম্মান জানালাম ব্রাজিলের হয়ে। তখন ভাবলাম এটা কিকরে তৈরি করব। রাখি সাওয়ান্ত এর কাছে গেলাম। মুম্বাইতে একটা ছোট মেয়েদের ফুটবল টিম নিয়ে আসা হল। একটার ক্যাপ্টেন রাখি আর একটার আমি। মাঠে নামলাম বৃষ্টি শুরু হল। ওই ভাবেই চলল খেলা। তৈরি হল ওই গান।
“সেনোরিতা”, তোমার এমন একটা গান, যেই গানের মধ্যে দিয়ে স্প্যানিশ ভাষাকে ভালবাসতে শুরু করে অনেকে। কিভাবে এল?
এটা কোন কারোর তৈরি করা নয়। বরাবরই একটা ভাষা আরেক ভাষাতে প্রভাব ফেলেছে। যেমন ধরো, “দো লাফজো কি হ্যাঁয় দিল কি কাহানি”।
আমোরে মিও, দোভে সেই তু?
My love, where are you?
তিস্তো সেরকান্দো, তেসোরো মিও।
I am searching for you, my treasure!”
এই ভাবেই তৈরি হয়ে এসেছে বরাবর।
“বিগ বস” থেকে কলকাতা তোমায় চেনা শুরু করল, কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
খুব ভালো ছিল অভিজ্ঞতা। আমি যখন এখানে এলাম, আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কি কর? বলেছিলাম করিনা করব, ওলা। সকলে বলেছিল এটা আবার কি? এটা মানে “হাই”। আমার নাম জানতে চেয়েছিল। বলেছিলাম অনেক বড় নাম। বিগ বস তো আমায় ডাকবেই। ওখানেই আমার নাম বলব।
আর এখন সকলে আমার বন্ধু। কনীনিকা, সুদিপ্তা, রুদ্র এদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে।
তোমার যে গান গুলো আছে, তার মধ্যে কোনটা তোমার পছন্দের?
“আঁখে টু” এর যে গানটা আসছে। “ডাকু ডাকু”।
তোমায় কি রবীন্দ্র সঙ্গীতে পাওয়া যাবে?
নিশ্চয়। রবীন্দ্রনাথ সকলের জন্য। উনি বলে জাননি কপি রাইটের ঝামেলায় ফেলতে। বলেননি কোন ভাষাতে আটকে রাখতে। হিন্দিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত হয়েছে। আমি চাই স্প্যানিশ এ নিয়ে আসতে কবিগুরুকে।
Facebook Comments