আই সি সি আর তখন পুরো ভর্তি। মুক্তি পেল শ্রী এর সিডি “এস শ্যামল সুন্দর”। প্রত্যেকের অপেক্ষা “এক পশলা রবি”র জন্য। একে সম্মান পেলেন গুণীজনেরা। ছিলেন অনেকেই। গুঞ্জনে শোনা যাচ্ছিল “অন্য মীর” এর কথা। শুরু হল সেই অনুষ্ঠান। কিছু সময় যেতেই প্রেক্ষাগৃহে শুধুই তিনটে গলা, মীর, অদিতি গুপ্ত এবং শ্রী। রবীন্দ্রনাথ যে আজও মানুষকে কাঁদাতে পারে তার প্রমাণ “এক পশলা রবি”। অনুষ্ঠানের শুরুতে সুবোধ সরকার বলেছিলেন, “আজ যদি মীরের জন্য রবীন্দ্রনাথকে কেউ শুনতে আসেন তাহলে মীরের হয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানাবো। আর যদি রবীন্দ্রনাথের জন্য মীর কে শুনতে আসে তাহলে তাহলে রবীন্দ্রনাথের হয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানাবো”। তবে শেষমেশ কেউ বোধহয় ধন্যবাদ কার জন্য এটা ভেবে উঠতে পারেননি।
আজ রবির মীরকে পাওয়া গেল?
আমি একটা প্রয়াস করেছিলাম ব্যাস এইটুকুই। তবে অনুভূতি তো আলাদাই। রবি ঠাকুরকে নিয়ে এইটা যে আমার প্রথম কাজ এমনটা নয়। অনেক আগে গীতবিতানের একটা কাজ করেছিলাম। ওটা অডিও বুক হয়েছিল তখন। বিদেশের জন্য হয়েছিল একটা অ্যালবামে কাজ করেছিলাম। হ্যাঁ লাইভ মঞ্চে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কখনও কাজ করিনি এর আগে। এটা আমার নতুন চ্যাপ্টার। মনে রাখার মত দিন। শ্রী এর সিডি “এসো শ্যামল সুন্দর” লঞ্চ করার দিন একজন সাংবাদিক বন্ধু জিজ্ঞাসা করেছিলেন “এর আগে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোন কাজ তো করা হয়নি?” সেইদিন বলেছিলাম না উনিও আগে চাননি আমিও আগে চাইনি। এবার আমরা ফাইনালই চাইলাম তাই কাজটা হচ্ছে।
এই যে রবি ঠাকুরকে নিয়ে কাজ, আপনাকে এটা শুনতে হয়নি যে “আপনি পারবেন?”
হ্যাঁ অবশ্যই। একজন বলেছিলেন আপনি কি পারবেন? আপনার তো শৈলী আলাদা স্টাইল আলাদা। সেদিন বলেছিলাম দেখুন একজন ব্যাটসম্যান সে টেস্টও খেলে ওয়ান ডেও খেলে আবার টি টোয়েন্টিও খেলে। সুতরাং তাকে যদি কেউ এই প্রশ্নটা করে যেমন উত্তর পাবে, আমিও উত্তর দেবো। আমি বাচিক শিল্পী। আমার কাজ আমার ধারা, নানান রকমের কাজ। একই ভাবে প্রত্যেক কাজ করি। ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে তা দর্শক বলবে। কিন্তু আমি করতে পারবো না এটা আমি নিজেও কোনদিন মেনে নেব না, অন্য কেউ বলছে সেটাও মেনে নেব না। “এক পশলা রবি” অন্য রকমের নিজের কাজ।
“এক পশলা রবি” কার জন্য?
আমার মনে হয় এই গোটা সন্ধ্যেটা শ্রী-এর জন্য। একজন রেডিও সঞ্চালিকা। কিন্তু এর বাইরেও ওর একটা জগৎ আছে। ফাইনালই ও কথা রেখেছে। আজ ওর সিডি সামনে এল।
এরকম “এক পশলা রবি” পেল শুধুই কি শ্রী-এর সিডি লঞ্চের জন্য?
না তেমনটা ঠিক নয়। শুধু মাত্র সিডি লঞ্চের জন্য এই অনুষ্ঠান সেটা বলা ভুল হবে। আমরা চেয়েছিলাম এমন একটা কিছু যেটা ওই সিডির সঙ্গে যায়। যেখানে ওর গুরু মা এত সাহায্য করেছেন। পুরো প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে এত দর্শক থেকেছেন, বসেছেন। ধৈর্য ধরে পুরো অনুষ্ঠান দেখেছেন এটা আমাদের কাছে বিরাট পাওয়া। আর অনেক নতুন প্রতিভা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এমন নয় রবীন্দ্রনাথ বিষয় তারমানেই বয়স্ক মানুষরা এরসঙ্গে কাজ করেছেন, রিসার্চ করেছেন। নতুন প্রতিভা সকলেই, অদিতি দি ছাড়া এই গ্রুপে আমি সিনিয়র। সুতরাং বুঝতে পাচ্ছেন এটা মনের কত কাছের।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তুমি বলেছিলে , “আপনারা আপনাদের ফোন চালু রাখুন, এটা এমন কোন ইভেন্ট নয় যে ফোন ব্যবহার করবেননা, বরং ফোন ব্যবহার না করলে আমাদের মন সংযোগে ব্যাঘাত ঘটবে”, তারফল কি পেলে?
এইরকম একটু বলতে হয়। না হলে না রিকোয়েস্টটা কেউ রাখে না। যদি বলি আপনারা ফোন সাইলেন্ট করবেন, তাতে কেউ করেন না। ভাবে ও বলেছে বলুক। হালকা একটু সেন্টুতে আঘাত দিলে দেখি তাতে বেশি কাজ হয়। আমি এর আগেও এটা করেছি দেখেছি কাজ হয়েছে।
এমন একটা উপস্থাপনা, যেটা মানুষকে কাঁদাতে পারে, তোমার নিজের কি অবস্থা হয়েছিল?
হ্যাঁ এটার রিহার্সাল করতে হয়েছে। যতবার পড়েছি, মনে হয়েছে আর নেওয়া যাচ্ছে না। স্ক্রিপ্টের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের নিজের কথা আমাদের প্রেজেন্টেশনে যেভাবে ফুটে উঠেছে সেটা শুধু আমাদের প্রয়াস ছিল। সকলের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে খুব খুশি।
তুমি যেভাবে রবীন্দ্রনাথের কথা গুলো বলছিলে তাতে মনে হচ্ছিল তুমি কিছু ভাবছ, সত্যি কি তাই?
আমার কাকা মারা গিয়েছেন কিছুদিন আগে। আমার পরিবার তখন গ্রামের বাড়িতে, আমি যেতে পারিনি। একটা অনুষ্ঠান ছিল। সেদিন কথা দিয়েছিলাম আমাদের একটা ৪০ দিনের কাজ হয় সেটাতে আমি উপস্থিত থাকবো। পরে হিসেব করে দেখেছিলাম ওটা পড়ছে ১৩ এপ্রিল। তার জন্য আমায় চলে যেতে হবে ১২ এপ্রিল। কিন্তু আজ আমি এখানে। কারণ খেয়াল করিনি আমি বহু আগে শ্রীকে কথা দিয়েছিলাম এই অনুষ্ঠানটার জন্য। আজও যেতে পারলাম না। একটা করে চিঠি পড়ছি আর কাকার মুখটা ভেসে উঠছে। তবে আমি জানি কাকা খুশি। কারণ এই কাজ টা আমি কাকার সঙ্গেই করতাম।
ছবি – নিজস্ব প্রতিনিধি
Facebook Comments