আগামী ৭ই সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে পরিচালক অভিষেক ও মিনাক্ষী’র প্রথম ছবি ‘কুয়াশা যখন’। প্যারানরমাল লাভ স্টোরির ওপর এই নির্মিত এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে গার্গী রায়চৌধুরী, শাতাফ ফিগার, অনিন্দ্য পুলক ব্যানার্জী, মানালি, এবং নবাগত ঋষভ। এই ছবিতে একটি অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋষভ। ছবিতে তাঁরর চরিত্রের নাম ‘অ্যালেক্স’। উত্তর কলকাতায় বেড়ে ওঠা ঋষভের অভিনয়ের হাতেখড়ি থিয়েটার দিয়ে। তারপর ‘মেঘনাদবধ রহস্য’, ‘মাটি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও ‘কুয়াশা যখন’ ছবিতেই প্রথমবার মুখ্য চরিত্র রুপে দেখা যেতে চলেছে ঋষভকে। তাই সে অর্থে এই ছবিকে ঋষভের ডেবিউ ছবিও বলা চলে। ছবিতে নিজের চরিত্র নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহী ঋষভ। আপাত ছবির প্রোমোশনেই ব্যস্ত এই তরুণ অভিনেতা। তারই মাঝে একদিন ‘কুয়াশা যখন’ ছবিতে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে What’s New Life-এর সাথে একান্ত আড্ডায় বসলেন ঋষভ।
‘কুয়াশা যখন’ ছবিতে তোমার অভিজ্ঞতা কেমন ?
ঋষভ– সত্যিই একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। যেহেতু একজন লিড চরিত্রে এটাই আমার প্রথম ছবি, ছবির দুই পরিচালকও নতুন। কিন্তু বাকি টিমটা কিন্তু অভিজ্ঞতায় ভরপুর ছিল। যেমন গার্গী দি, শাতাফ দা, অনিন্দ্য দা, মানালি। তাই এদের সাথে আমরা নতুনরা কাজ করছি তাই আমাদের একটা আলাদা উত্তেজনা ছিল। আমার ছিল এবং অভিষেক’দা ও মিনাক্ষী’দিও উত্তেজিত ছিল। এদের সাথে কাজ করতে গিয়ে খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সবমিলিয়ে এই ছবির অভিজ্ঞতা সত্যিই দারুণ।
এই ছবিতে তোমার চরিত্র বেশ কঠিন। ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ে তোমার প্রথমে কি মনে হয়েছিল ?
ঋষভ– আমি যেহেতু থিয়েটার থেকে উঠে এসেছি তাই সবসময় চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে ভালোবাসি। আমার প্রথম ছবি ‘মেঘনাদ বধ রহস্য’ তে আমি বেনুকাকু(সব্যসাচী চক্রবর্তী)’র ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপরে ‘মাটি’তে আদিল হুসেন’এর সাথে কাজ করলাম। ওনার সাথে স্ক্রিন শেয়ার করা সত্যিই একটা গর্বের ব্যাপার। ‘কুয়াশা যখন’ অবশ্যই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। আসলে প্রথম ছবিতে সবাই একটা হিরোর বা অ্যাকশন হিরোর চরিত্রে অভিনয় করতে চায়। কিন্তু চরিত্র নিয়ে সবাই ভাবে না। কিন্তু ‘কুয়াশা যখন’ ছবিতে আমার চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য আমাকে অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। কিছুটা নিজের চেষ্টায় করেছি। মীনাক্ষী’দিও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার মনে চ্যালেঞ্জ যত শক্ত হয়, পারফরমেন্স করার তাগিদটা তত বেড়ে যায়।
চরিত্রটা করতে গিয়ে তোমার কি মনে হয়েছে ?
ঋষভ– আসলে আমাদের ভারতীয় সিনেমাতে হিরোকেন্দ্রিক ছবির একটা চাহিদা প্রথম থেকেই রয়েছে। যেহেতু আমি সিনেমার ছাত্র, তাই আমি এটা বলতে পারছি। তবে এখন কিন্তু ধীরে ধীরে এটা পালটাচ্ছে। এখন আর ছবিতে হিরো নয়, চরিত্ররাই মুখ্য হয়ে উঠছেন। মানুষ আর হিরোদের টানে নয় গল্পের টানে হলমুখি হচ্ছে। বাংলা সিনেমাতেও সেই ছোঁয়া লেগেছে। আমার মনে হয় বাংলা সিনেমা একটা নতুন ফেজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এত বড় অভিনেতা-অভিনেত্রিদের সাথে কাজ করতে গিয়ে কি মনে হয়েছিল ?
ঋষভ– সত্যি কথা বলতে কি, স্ক্রিপ্ট’টা পড়ার পরে আমি একটু ভয়ই পেয়েছিলাম। এত বড় একটা চরিত্র, এত বড় বড় সমস্ত অভিনেতাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল করে ফেলব নাকি, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু যখন কাজ শুরু করলাম, তখন গোটা টিমের সবাই এত সাহায্য করল যে প্রথম দু-একদিনেই সমস্ত ভয় উড়ে গেল। তারপর আমি আমার চরিত্রটাকে বেশি করে উপভোগ করতে শুরু করি। অভিষেক’দা ও মীনাক্ষী’দি প্রথম থেকেই আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে। আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমি সত্যিই আমার পুরো টিমের কাছে খুব কৃতজ্ঞ।
এই চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য তোমায় কি কি করতে হয়েছে ?
ঋষভ – প্রথম যেটা হল, অসম্ভব একটা ডায়েট করতে হয়েছে। নিয়মিত ওয়ার্কআউট করতে হয়েছে। মীনাক্ষী’দি আমার চরিত্রটা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলেন। ‘অ্যালেক্স’ চরিত্রটা যাতে পর্দায় ঠিক ভাবে ফুটে ওঠে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর ছিল মীনাক্ষী’দির। তাই আমাকে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয়েছিল। বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়াও। রোজ খুব ভোরে উঠতাম। তবে আমি এই প্রসেসটাকে উপভোগ করেছি। আর চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য কিছু পড়াশোনা করতে হয়েছে। আসলে এই ধরনের চরিত্র নিয়ে আমাদের তো খুব বেশি ধারনা নেই। তাই এই চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এই বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। মীনাক্ষী’দিও আমাকে সাহায্য করেছে।
শ্যুটিং এর সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার কর।
ঋষভ- শ্যুটিং এর সময়ে আমরা দারুণ মজা করেছি। আমি যখন প্রথম থিয়েটারের জগতে আসি, তখন আমি একটা কথা শুনেছিলাম যে ভালো মানুষ না হলে ভালো অভিনেতা হওয়া যায় না। ‘কুয়াশা যখন’ ছবিতে যাদের সাথেই কাজ করেছি তারা সবাই ভালো অভিনেতার পাশাপাশি খুব ভালো মানুষও। এত সিনিয়র হওয়া সত্বেও ওনারা আমাকে বুঝতেই দেয়নি যে আমি নতুন। সবাই আমাকে প্রচুর সাহস জুগিয়েছে। শ্যুটিং এর সময়ে কিছু মজার ঘটনাও ঘটেছে। ছবির ক্লাইম্যাক্স এর যখন শ্যুট চলছিল সেই সময় আমাদের বৃষ্টি, ঝড়, বিদ্যুৎ চমকানো এইসমস্ত জিনিসগুলো দরকার। এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা ছিল। কিন্তু সেগুলোর কোন দরকার পড়েনি। ক্লাইম্যাক্সের সময় সবকিছু প্রাকৃতিক ভাবেই হল। এছাড়া শাতাফ’দার কথা বলব। শাতাফ’দা খুব খেতে ভালোবাসত। যখন বেলগাছিয়া রাজবাড়িতে শ্যুট চলছিল তখন আমি প্রায় শাতাফ’দার জন্য বিভিন্ন খাওয়ার নিয়ে যেতাম। এছাড়া মানালি খুব ভুতে ভয় পেত। ওকে আমরা মাঝে মাঝে ভয় দেখাতাম। সবমিলিয়ে শ্যুটিং চলাকালীন সময়ে আমরা দারুণ মোজা করেছি।
বাস্তব জীবনে তুমি কি ভুতে ভয় পাও ?
ঋষভ– আসলে আমি যেহেতু উওর কলকাতার পাড়া কালচারে বড় হয়েছি তাই আমার মধ্যে ভয়ডর একটু কম। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু ডাকাবুকো। ভুতে অনেকেই ভয় পান আমি জানি। তবে আমি কিন্তু কোনদিন কাউকে বলতে শুনিনি যে ভুত কারোর ক্ষতি করছে। তাই আমার মনে হয় ভয়টা আসলে আমাদের মনে। ছোটবেলা থেকেই এই ভয়টার সাথেই মানুষ বড় হয়। ছোটবেলায় আমাদের অন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হত। কেননা আমরা অন্ধকারকে ভয় পাই। অন্ধকার মানে আসলে অজ্ঞতা। এই ছবিতে কাজ শুরু করার সময়ে আমার মনেও কিছু অজ্ঞতা ছিল। ‘কুয়াশা যখন’ ছবিতে কাজ করতে করতে আমার মনের সেই অজ্ঞতা দূর হয়েছে। আমি আশাবাদী এই ছবিটি দেখলে দর্শকের মনের অনেক অজ্ঞতাও দূর হবে।
আড্ডা শেষে ঋষভ জানালেন, বর্তমানে বাংলা ছবি বড্ড একঘেয়ে হয়ে পড়েছে। ‘কুয়াশা যখন’ কিন্তু সেই তালিকার মধ্যে পড়েনা। এই ধরনের বিষয় নিয়ে আগে বাংলা সিনেমাতে কোন কাজ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার বিশ্বাস দর্শক এই ছবির মধ্যে একটা আলাদা ঘরানা খুঁজে পাবে।
Facebook Comments