টলিউডে নতুন এসেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন অভিনেতা সন্দীপ ভট্টাচার্য। থিয়েটার, সিরিয়াল, মডেলিং-এর পাশাপাশি সিনেমাতেও সমান ভাবে কাজ করে চলেছেন সন্দীপ। সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘শর্টকাট’ ছবির শুটিং। এই ছবিতে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অপু বিশ্বাস, গৌরব চক্রবর্তীর মতো অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছেন সন্দীপ। আগস্টের প্রথমের দিকেই শুরু হচ্ছে একটি নতুন ছবির কাজ। এছাড়াও একটি ওয়েব সিরিজেও দেখা যেতে চলেছে তাকে। এই ওয়েব সিরিজে একজন গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে সন্দীপকে। যেই গোয়েন্দা সিগারেটের বদলে চকলেট খেতে খেতে রহস্যের জট খোলে। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে বেজায় ব্যস্ত সন্দীপ। কাজকেই একমাত্র ধ্যানজ্ঞ্যন করে এগিয়ে চলেছে সন্দীপ। তারই মাঝে What’s New life এর সাথে একান্ত আড্ডায় বসলেন সন্দীপ।
১. তোমার অভিনয় জীবনের শুরুটা কিভাবে হলো?
সন্দীপ– অভিনয়ের শুরুটা আমার থিয়েটারের হাত ধরেই। স্কুলে পড়াকালীন আমি নিয়মিত থিয়েটার করতাম। তারপর থিয়েটার করতে করতে আমি একটা সিরিয়ালে অভিনয় করার ডাক পাই। সিরিয়ালে কাজ করতে করতে মডেলিং-এর কাজ করতে শুরু করি। এখন আমি প্রায় ৫ টা ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট করছি। এইভাবে কাজ করতে করতেই সিনেমায় ডাক পাই।
২. এই প্রফেশনে আসার পেছনে বাড়ির কি কোন ভূমিকা ছিল?
সন্দীপ– সেই ভাবে কিছু ছিল না। তবে বাবা মা সবসময়েই প্রচণ্ড সাপোর্ট করে এসেছেন। কেননা এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা জোন। এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টিকে থাকতে হয়।
৩. সিরিয়াল, সিনেমা মডেলিং একসাথে কিভাবে সামলাচ্ছো?
সন্দীপ– এই প্রশ্নটা আমাকে অনেকেই করেছে এর আগে। আসলে আমি যেই সময় কাজ শুরু করি সেই সময় আমি প্রচণ্ড অলস ছিলাম। দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা করে ঘুমোতাম। খুব মোটা ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে সেই অলসতা কাটিয়ে উঠি। আসলে, মানুষ যখন কোন কাজকে ভালোবেসে করে তাহলে সেই কাজে সে সফল হবেই। আমি থিয়েটার করতে করতে যখন দেখলাম যে আমি এই কাজটাকে ভালোবেসে ফেলেছি তখন আমি ধীরে ধীরে নিজের পি.আর করতে শুরু করি। যেটা এখন খুব দরকারি। তবে সিরিয়ালটা আর করলাম না তার কিছু কারণ আছে। কোন চ্যানেলে সিরিয়াল করলে আর অন্যান্য কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি নিয়মিত কিছু সোশ্যাল পোগ্রামের সাথে যুক্ত রয়েছি। সিরিয়ালে অভিনয় করলে এই সমস্ত কাজগুলোর জন্য আর সময় বের করা হয়ে ওঠে না।
৪. সম্প্রতি ‘শর্টকাট’ ছবির শ্যুটিং শেষ করলে। এরপরে কোন ছবিতে দেখা যাবে তোমাকে?
সন্দীপ– সবে মাত্র ‘শর্টকাট’এর কাজ শেষ করলাম। আর একটা আমার ছবি খুব তাড়াতাড়িই সামনে আসবে। এখনই ছবির নামটা বলতে চাই না। জুলাই’এর শেষে বা আগস্টের শুরুতেই শ্যুটিং শুরু হবে।
৫. এখন তো মানুষ হলের থেকে বেশি মোবাইলে সিনেমা দেখতে বেশি পছন্দ করেন। সেটা নিয়ে কি বলবে?
সন্দীপ– আসলে আগে তো মানুষের কাছে অন্য কোন উপায় ছিলনা। তখন মানুষের এন্টারটেনমেন্টের আর কোন উপায় ছিল না। তারপরে এল টেলিভিশন। আর এখন মানুষের হাতের মুঠোতে পৌঁছে গেছে মোবাইল। মানুষ মোবাইলেই কল করা থেকে শুরু করে বাজার করা, সিনেমা দেখা সবকিছুই ওই মুঠোফোনের মাধ্যমে সেরে নিচ্ছে। কিন্তু আমি দর্শকদের বলব হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে। মানুষ হলমুখী না হলে বাংলা ছবিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
৬. বাণিজ্যিক ভাবে বাংলা ছবির এখন অবস্থা কেমন?
সন্দীপ– বাণিজ্যিক ভাবে বাংলা ছবির অবস্থা এখন আগের থেকে অনেক ভালো। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি খারাপ অবস্থাটা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে। তবে আগের থেকে কিছু হল কমেছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা এটা। আমার মনে হয়, আমাদের সবাইকে বাংলা সিনেমাকে সব থেকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে হবে তবেই বাংলা ছবির উন্নতি সম্ভব। অনেক ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে টলিউডে। কিন্তু তারা যদি পর্যাপ্ত সংখ্যায় হল না পায় তাহলে তো কিছুই করার নেই। আসলে বাংলা ছবির প্রথম সপ্তাহের কালেকশনের অবস্থা খুবই খারাপ থাকে। আসলে এটাতো হিন্দি ছবি নয়। প্রথম সপ্তাহের কালেকশন দেখেই অনেক হল থেকে বাংলা ছবি গুলি উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলস্বরুপ যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
৭. হিন্দি সিনেমার তুলনায় বাংলা সিনেমার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে বলে তোমার মনে হয়?
সন্দীপ– হিন্দিতে অনেক বড় বাজেটের ছবি তৈরি হয়। আমাদের বাজেট ওদের ধারেকাছেও থাকে না। এটা অবশ্যই একটা বড় ফ্যাক্টর। সেই জন্যই বাংলা সিনেমার উন্নতিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে হলমুখী হতে হবে। নাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলা সিনেমাকে দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
৮. সিনেমা না ওয়েব সিরিজ কোথায় কাজ করতে তুমি বেশি আগ্রহী?
সন্দীপ– অবশ্যই সিনেমাকেই এগিয়ে রাখবো। আমি একটা ওয়েব সিরিজেও কাজ করছি। ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে এখন অনেক সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। আসলে মানুষ এখন অলস হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে বসেই সব কাজ সেরে নিতে চায়। সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ দুটোই প্রয়োজনীয়। মানুষ ওয়েব সিরিজ দেখুক তার সাথে হলে এসে সিনেমাও দেখুক। তবেই ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে। দুটো জায়গাতেই মানুষের পরিশ্রম আর অর্থ জড়িয়ে রয়েছে। ‘সঞ্জু’ এত ভালো ব্যবসা করেছে। বাংলা ছবিও করছে। ‘হামি’, ‘উমা’ খুব ভালো ব্যবসা করেছে। আমি আশাবাদী যে আমার আগামী ছবি ‘শর্টকাট’ খুব ভালো ব্যবসা করবে। অনেক ভালো অভিনেতা রয়েছে এই ছবিতে। খুব সুন্দর একটি গল্প।
৯. ‘শর্টকাট’ ছবিতে বাংলাদেশী নায়িকা অপু বিশ্বাসের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সন্দীপ– খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। উনি একজন অসাধারণ অভিনেত্রী। খুবই সাপোর্টিভ। বাংলাদেশে ওনার কেন এত জনপ্রিয়তা বুঝতে পেরেছি ওনার সাথে কাজ করে।
১০. তোমার আসন্ন ওয়েব সিরিজ নিয়ে যদি কিছু বলো?
সন্দীপ– আমি এই ওয়েব সিরিজে একজন গোয়েন্দার ভূমিকায় অভিনয় করছি। যেই গোয়েন্দা সিগারেট খায় না, চুরুট টানেনা শুধু চকলেট খেতে খেতে একের পর এক রহস্যের সমাধান করে।
ইন্টারভিউ এর শেষে সন্দীপ জানিয়ে রাখলেন বাংলা সিনেমাকে আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। আমি একা বা আর কয়েকজন মিলে এই বিশাল কাজটা করতে পারব না। তাই সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এমনকি দর্শকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তবেই একদিন টলিউড আরও অনেক উপরে যাবে। আরও অনেক ভালো ভালো কাজ মানুষ এই ইন্ডাস্ট্রির থেকে পাবে।
ছবি- কোয়েল পাল
Facebook Comments