বাংলা সিনেমায় প্রথমবার ‘প্যারানরমাল লাভ’ নিয়ে ছবি করতে চলেছেন পরিচালক অভিষেক ও মিনাক্ষী। ছবির নাম ‘কুয়াশা যখন’। এই ছবির হাত ধরেই টলিউডে পরিচালক হিসেবে ডেবিউ করছেন এই দুই পরিচালক। এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে, গার্গী রায়চৌধুরি, শাতাফ ফিগার, অনিন্দ্য পুলক ব্যানার্জী, মানালি দে, নবাগত ঋসভ বসু সহ একাধিক অভিনেতাদের। ছবির এক পরিচালক মীনাক্ষী দীর্ঘদিন পড়াশোনা করছেন প্যারা সাইকোলজি নিয়ে। পুনর্জন্ম নিয়ে গবেষণাও করছেন দীর্ঘদিন থেকে। সেই থেকেই ইচ্ছে ছিল এই বিষয় নিয়ে ছবি বানানোর। এতদিনে যা সম্ভব হল। কিন্তু এই ধরনের গল্প কতটা হলমুখী করতে পারবে বাংলা সিনেমার দর্শকদের ? এই ছবিতে এমন কি রয়েছে যা এই ছবিটিকে অন্যান্য ছবিগুলোর থেকে আলাদা করে। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে What’s New Life এর সাথে আড্ডায় বসলেন ছবির দুই পরিচালক অভিষেক ও মীনাক্ষী।
১. ছবির নাম ‘কুয়াশা যখন’ কেন রাখলেন?
অভিষেক– কুয়াশা মানেই কিন্তু একটা ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা ব্যাপার থাকে। আমাদের ছবিটাও ঠিক তাই। একটা সাসপেন্স থাকছে। কুয়াশা বা ধোঁয়াশার পরেই আমরা একটা সুন্দর সকাল দেখতে পাই। তাই আমাদের ছবির গল্পের সাথে মিলিয়েই আমরা এই নামটা ঠিক করেছি।
২. আপনারা বলছেন এই ছবিটা একটা ‘প্যারানরমাল লাভ’। এই শব্দটার সম্বন্ধে দর্শককে যদি একটু বুঝিয়ে বলো।
মীনাক্ষী– প্যারানরমাল হল এমন একটা জিনিস যেটা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু অনুভব করা যায়। আমাদের বাড়িতে বা চারিপাশে এমন অনেক কিছুই দেখি যা আমাদের অবাক করে। ধরুন, আপনি বাড়িতে একটা জিনিস কোথাও রাখলেন কিন্তু খুঁজতে গিয়ে পেলেন অন্য একটা জায়গায়। কিন্তু আপনি একেবার নিশ্চিত যে জিনিসটা আপনি ওখানে রাখেননি। এইরকম জিনিসগুলোকেই আমরা প্যারানরমাল বলবো।
৩. সাধারণ ভুতের ছবিগুলোর থেকে ‘কুয়াশা যখন’ কতটা আলাদা?
মীনাক্ষী– এই বিষয়টা নিয়ে ভারতীয় সিনেমায় খুব বেশি চর্চা হয়নি। ছবির বিষয়টা সত্যিই আলাদা। প্যারা সাইকোলজি নিয়ে আমি পড়াশোনা করেছি। প্রত্যেকটা মানুষের মন অন্যরকম হয়। নির্ভর করছে সেই মানুষটার চারপাশটা কেমন। কোন মানুষের চারিদিক যদি নেগেটিভ বিষয়বস্তু থাকে তাহলে ওই মানুষটার মনের মধ্যেও নেগেটিভ চিন্তাভাবনা ঘোরাফেরা করবে। আর যদি আমাদের চারিদিকে পজিটিভ জিনিস দেখি তাহলে আমাদের মনের মধ্যেই সেই পজিটিভ জিনিসগুলো ঘোরাফেরা করে। এই চিন্তার জন্যই আমরা আমাদের আশেপাশে আমরা অনেক কিছুই অনুভব করি। কিন্তু তা চোখে দেখতে পাওয়া যায় না। এই চিন্তাভাবনার মধ্যেই অনেকটা নির্ভর করে আমাদের জীবন মৃত্যুর পরে কেমন হবে।
৪. ছবিতে দুটো সময়কে দেখানো হয়েছে। সেটা নিয়ে যদি কিছু বলো।
অভিষেক– ছবিতে আমরা দুটো ভিন্ন সময়কে ফুটিয়ে তুলেছি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এবং বর্তমান। জমিদারী প্রথা যেই সময়টায় ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে দিকে যাচ্ছে। এই সময়টাকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। সেই সময় একজন জমিদার কি কি করতেন এবং কি কি করতেন না তা নিয়ে রিসার্চ করেছি। বর্তমান সময়ের পিরিয়ডে এই ছবির বিষয়বস্তুকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অ্যালেক্স নামের একটি চরিত্র। যেই চরিত্রটি করেছে নবাগত ঋসভ। ঋসভ খুবই ভালো কাজ করেছে এই ছবিতে।
৫. নিজেদের প্রথম ছবিতেই নতুন মুখদের সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত একটু রিস্কি হয়ে গেলো না ?
মীনাক্ষী– দেখো, এখন ছবির দর্শকও অনেক বুদ্ধিমান। এখন আর কেউ শুধু নাম দেখে সিনেমা দেখতে যায় না। ছবির গল্প দেখেও যায়। আমরা নিজেরাও তাই। দর্শকের যদি কোন গল্প ভালোলাগে সেক্ষেত্রে ছবির অভিনেতা নতুন না পুরনো তাতে কিছু যায় আসে না। কনটেন্ট ভালো হওয়া খুব জরুরী। আর যেহেতু আমরাও নতুন তাই আমরা চাইছিলাম কিছু নতুন লোকজনের সাথে কাজ করতে। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক চিরন্তন একেবারে নতুন। কিন্তু ওর কাজ দেখে কেউ ওকে নতুন বলবে না।
৬. শ্যুটিং এর সময়ের কোন মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাইবে?
অভিষেক– একটা কথা বলতেই হয়। আমাদের শ্যুটিং এর সময়ে প্রকৃতি আমাদের খুব সাহায্য করেছে। ছবিতে একটা সিন আছে যেখানে বৃষ্টি এবং বিদ্যুৎ চমকানো দেখানোর ছিল। আমরা সেগুলো দেখানোর বিকল্প ব্যবস্থা করেছিলাম। বড়ই অদ্ভুত বিষয় যে সেই ব্যবস্থাগুলোকে প্রয়োজন পড়েনি। আমাদের শ্যুটিং এর সময় যখন যখন বৃষ্টি বা বজ্রপাত দরকার ছিল তখন প্রকৃতি নিজে থেকেই সেগুলো দিয়েছে। আমরা সত্যিই খুব অবাক হয়েছিলাম।
মীনাক্ষী– আসলে আমরা মনে করি যে এটা হঠাৎ ঘটে গেল। কিন্তু কোন কিছুই হঠাৎ ঘটেনা। সবকিছুই কোন একজনের দ্বারা পূর্ব পরিকল্পিত।
৭. ছবির শ্যুটিং কোন কোন জায়গায় হয়েছে?
অভিষেক- আমরা হাড়িপোতা নামের একটা জায়গায় আউটডোর শ্যুট করেছি। তবে বেশিরভাগ শ্যুটিং হয়েছে বেলগাছিয়া রাজবাড়ীতে।
৮. শ্যুটিং এর সময় সেটে খুব খাওয়াদাওয়া হত বলে শোনা গেছে?
অভিষেক– হ্যাঁ। এটা সত্যি। শ্যুটিং এর সময়ে অনেক মজা করেছি। একসাথে লাঞ্চ ডিনার সবই করতাম। রোজই অনেক গল্প হত। মুড়ি খাওয়া হতো, চানাচুর খাওয়া হতো। প্রচুর খাওয়াদাওয়া হতো।
মীনাক্ষী– শাতাফ আর মানালির একসাথে কিছু সিন ছিল। সেইগুলো শ্যুট করতে গিয়ে ভীষণ মজা করেছি। শাতাফের বাংলাতে একটু সমস্যা ছিল। এমন হয়েছে যে ও শ্যুটের সময় ভুল বাংলা বলেছে। আর সেটা নিয়ে মানালি সিরিয়াস শ্যুটের সময়ে হা হা করে হেসে উঠেছে।
৯. ছবির গানগুলো নিয়ে যদি কিছু বলো।
অভিষেক– ছবিতে মোট চারটি গান রয়েছে। মজার কথা হল যে চারটে গানই ভিন্ন স্বাদের। রূপঙ্কর একটা গান গেয়েছে। রাজ বর্মণ একটা গেয়েছে। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চিরন্তন দারুণ কাজ করেছে। আমরা ওর সাথে ছবির মিউজিক নিয়ে বারবার আলোচনায় বসেছি। এখনকার বাংলা সিনেমার গান বড্ড একইরকমের হয়ে গেছে। অনেকদিন পরে বাংলা সিনেমার দর্শকরা একই ছবিতে চারটে আলাদা রকম গান শুনতে পাবে। গানগুলো নিয়ে আমরা অনেক ভেবেছি। আমি আশাবাদী ছবির মিউজিক মুক্তি পেলেই গানগুলি জনপ্রিয় হবে।
মীনাক্ষী– সবথেকে বড় কথা হল আমরা প্রত্যাকটি গানে অর্গানিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেছি। যেটা সচরাচর হয় না।
নিজেদের প্রথম ছবি ‘কুয়াশা যখন’ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী দেখাল দুই নব্য পরিচালককে। মীনাক্ষীর কথায়, “দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে ছবি বানানোর পরিকল্পনা করছি। অনেক পড়াশোনা এবং গবেষণা করেছি এই বিষয় নিয়ে। আশা করি দর্শক এই ছবির মধ্যে আলাদা একটা কিছু অনুভূতি খুঁজে পাবে। যেগুলো সাধারণ মানুষের সাথে প্রতিনিয়তই ঘটে কিন্তু তার কোন অস্তিত্ব থাকেনা সেই ধরনের কিছু অনুভূতি এই ছবির মধ্যেও খুঁজে পাবেন দর্শক”। ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন পাশে বসে থাকা অভিষেক।
নিজস্ব চিত্র
Facebook Comments