নারীদের জন্য কড়াকড়ি পোশাকবিধি রয়েছে ইরানে। দেশটিতে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। তবে এই বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে একটি অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক নারী। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে গত শনিবার রয়টার্স জানিয়েছিল, পোশাকবিধির প্রতিবাদ জানিয়ে ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীরের পোশাক খুলে শুধু অন্তর্বাস পরে হেঁটেছেন ওই নারী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা শুধু অন্তর্বাস পরা অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় ওই নারীকে আটক করেছেন। তবে আটকের পর তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনো জানা যায়নি। শুধু তাই নয়, ঘটনার দুই দিন পরও আজ সোমবার পর্যন্ত ওই নারীর পরিচয় এখনো অজানা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র আমির মাহজব এক্স মাধ্যমে জানিয়েছিলেন-দুই সন্তানের জননী ওই নারী তাঁর সঙ্গীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। তিনি গুরুতর মানসিক চাপের মধ্যে আছেন এবং তিনি মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা মত দিয়েছেন, ওই নারী জেনে-বুঝেই সজ্ঞানে ওই পদক্ষেপ নিয়েছেন। কড়াকড়ি পোশাকবিধির বিরুদ্ধে এটি ছিল তাঁর একটি অভিনব প্রতিবাদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একদল লোক ওই নারীকে ধরে একটি গাড়িতে তুলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্রের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ওই নারীকে পরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে এটাও বলেছিলেন যে, নারীর স্বাস্থ্য ভালো আছে। তরে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট উত্তর না থাকায়, তাঁর সুস্থতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিভিন্ন মহল।
বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আমির কবির নিউজলেটার’ নামে ইরানি শিক্ষার্থীদের একটি চ্যানেল দাবি করেছে, অন্তর্বাস পরা অবস্থায় ওই নারীকে গ্রেপ্তারের সময় মারধর করা হয়েছিল।
অ্যামনেস্টিও বলেছে, ওই নারীকে সহিংসভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁর দ্রুত মুক্তি দাবি করেছে সংস্থাটি। লন্ডন-ভিত্তিক একটি অধিকার গোষ্ঠীও ওই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এর আগে ২০২২ সালে ইরানের নীতি পুলিশের ইরানি কুর্দি নারী মাশা আমিনির মৃত্যু হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় দেশটিতে বিপুলসংখ্যক নারী রাস্তায় নেমে পোশাকবিধির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক সহিংস উপায়ে এই বিক্ষোভ দমন করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
Facebook Comments