বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখাল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ)। সেইসাথে দলের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এক প্রতিনিধি দল দূতাবাস প্রধান সিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান’এর সাথে দেখা করে এবং একটি স্মারকলিপি তুলে দেয়।
পরে নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ঘটনা চলছে অবিলম্বে এটাকে বন্ধ করতে হবে, যাতে সেখানে দ্রুত শান্তি ফিরে আসে। সেখানকার সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। তাদের পাশে থাকতে হবে। আমরা মিশনের কর্তাদের মারফত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই বার্তা দিয়েছি।’
সিদ্দিকী আরও জানান ‘আমরা দেখেছি গতকালকেও বাংলাদেশের মাজারে ভাঙচুর করা হয়েছে, বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে আঘাত করা হয়েছে- এগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। পাশাপাশি যে আইনজীবীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে সেই বিষয়েও তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া উচিৎ।’
পাশাপাশি যেভাবে আজ সকালে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের জাতীয় পতাকা রেখে তার উপরে হাঁটাচলা করেছে তাতে যথেষ্ট অপমান বোধ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের এই নেতা। তিনি বলেন ‘এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অত্যন্ত পীড়াদায়ক ঘটনা। হাইকমিশনের কর্তারাও এ ব্যাপারে সহমত হয়েছে। পরবর্তীতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে উপ-হাইকমিশনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
যদিও এদিন বিকালে স্মারকলিপি জমা দেওয়া’কে কেন্দ্র করে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় মিশন চত্বরে। আইএসএফ দলের তরফে সেই স্মারকলিপি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের হাতে দিতে চাইলেও মিশনের রিইসেপশন তাদের কাছে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু আইএসএফ’এর তাদের দাবিতে অনড় থাকে। একসময় এই দাবিতে মিশনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এই খবর শুনে সেখানে চলে আসেন আইএসএফ বিধায়ক নৌসাদ সিদ্দিকী। পরে সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আইএসএফের প্রতিনিধি দলকে ভিতরে ডেকে নেওয়া হয়।
পরে আলাদাভাবে এদিন উপ-হাইকমিশনে স্মারকলিপি জমা দেয় সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান বাংলাদেশের চলমান ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সেখানকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানান।
অন্যদিকে এদিন দুপুরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস’এর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় আলোচনা চেয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিরোধী দল বিজেপির বিধায়করা আলোচনা চাইলেও, তাতে সম্মতির দেয়নি বিধানসভার স্পিকার পরবর্তী বিমান ব্যানার্জি। এরপর চিন্ময় দাসের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিধানসভায় প্রদর্শন করে বিজেপি।
এদিকে শুক্রবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় মুখ খুলেছেন বিজেপি সাংসদ এবং অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। কলকাতা বিমানবন্দরে তিনি বলেন, ‘যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে সেটা আমাদের হিন্দুদের জন্য খুবই চিন্তার বিষয়। যেভাবে ওখানে হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে, সাধু সন্ন্যাসীদের যে দুর্দশা এটা আমাদের খুবই চিন্তার বিষয়। সব থেকে বড় কথা এটা নিয়ে এখানে কোনও আন্দোলন নেই। এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুলিতেও এনিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ নেই।’
কঙ্গনার অভিযোগ, ‘শান্তিতে নোবেল পাওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পরই অশান্তি শুরু করেছেন। এই কঠিন সময় আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আছি, সেখানকার হিন্দুদের সাথে আছি।’
এর আগে বুধবার ও বৃহস্পতিবার পর পর দুই দিন মিশন চত্বরে আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, কংগ্রেস এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। বৃহস্পতিবারই হিন্দু জাগরণী মঞ্চ’এর প্রতিবাদকে ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতার বেকবাগানে অবস্থিত মিশন চত্বর। প্রতিবাদকে ঘিরে যাতে কোন রকম অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে দিকে লক্ষ্য রেখে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে বেশ কয়েকটি ব্যারিকেড করে রাখা হয়। কিন্তু তারপরেও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মী, সমর্থকরা ব্যারিকেড টপকে সামনের দিকে এগোতে থাকে। এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা, কাঠের বাটাম ছুঁড়ে মারে। এসময় এক পুলিশ কর্মী আহত হয়। এরপরই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা মিশনের অদূরে বাংলাদেশী পতাকা ও মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল পোড়ায়।
গত বুধবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির ৮ বিধায়কের প্রতিনিধি দল উপ-হাইকমিশনের কর্তাদের সাথে দেখা করে চিন্ময় দাসের নিঃস্বার্থ মুক্তির দাবী জানায়। আগামী রবিবারের মধ্যে চিন্ময় দাস’কে মুক্তি না দিলে সোমবার থেকে ভারত ও বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল সীমান্ত অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন শুভেন্দু অধিকারী।
Facebook Comments