অ্যাওয়ার্ড নিতে যাবে কিন্তু বউ মুখে জল ছিটিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিল। খুব চেনা সিনেমা সংক্রান্ত স্ট্রাগলের সিন দিয়ে সিনেমা শুরু হয়েছিল। শুরুটা ছিল সত্রাজিৎ সেনের প্রথম ছবি “মাইকেল” এর। চেনা ছকের মধ্যে দিয়ে শুরু করে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বহু চেনা অথচ চোরাবালির গল্প হাসি ও ভালো চিত্রনাট্য দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুললেন পরিচালক। মাইকেল এর চরিত্রে মীর। মিরাক্কেল ও রেডিওর বাইরে মীর যে ভালো অভিনেতা তা তিনি আগেই প্রমাণ করেছেন কিন্তু এই সিনেমায় তার অভিনয় সেই প্রমাণিত তথ্যে সিলমোহর দিয়ে দিল। স্বস্তিকা মুখার্জির মাইকেলের স্ত্রী হিসাবে দাপুটে অভিনয়ের পাশে মীরের অভিনয় মনে দাগ কেটে যাবেই। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে অরুণিমা, তনুশ্রী, সায়ন্তনী ও কাঞ্চন মল্লিক যথাযথ। মেহের নামক অবাঙালির চরিত্রে তনুশ্রীর হিন্দি মানানসই কিন্তু সেই অবাঙালি চরিত্রটি বাংলা বলার সময় ভীষন বেশি বাঙালির মতো বাংলা বলে, এইটা একটু শ্রুতিকটূ।
এই সিনেমা একজন সাধারণ চাকরিজীবী মানুষের বাংলা সিনেমার ডিরেক্টর হয়ে উঠার গল্প। যে কিনা নাটকের ডিরেকশন দেয় অফিসের বসকে মিথ্যা কথা বলে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে এসে। তার ডিরেক্টর হওয়ার যাত্রায় পাশে পায় বাংলা সিনেমার প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা ময়ূরবাহনকে। ময়ূরবাহনের চরিত্রে সৌমিত্র চ্যাটার্জি। সৌমিত্রবাবুর অভিনয় ও স্ক্রিন প্রেজেন্স আপনাকে প্রেমে ফেলতে বাধ্য। ওই ভুবনভোলানো হাসি যে তাঁর আজও অক্ষত। তাই তিনি মাছ হাতে ভগবান হতে পারেন বা আধুনিক কৃষ্ণতেও সমানভাবে সাবলীল।
সিনেমার প্রথম পর্ব চিত্রনাট্য ও মীরের মিরোচিত অভিনয়ের জন্য অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরিয়ে তুলবে মন এবং হাসিতে পেটে ব্যথাও হতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের বেশ কিছু জায়গায় যথাযথ নয় এমন জাম্পকাট ও চিত্রনাট্যের দুর্বলতার জন্য সিনেমা গতি হারায়। তবে বহুদিন পর বাংলা সিনেমায় কমেডি স্যাটায়ার করার যে প্রচেষ্টা পরিচালক দেখিয়েছেন তাকে বাহবা দিতে হয়। সাধারণত এই ধরনের সিনেমায় কিছু পরিচিত জোকস ও নোংরা দুরকম মানে করা ডায়ালগে ভরা থাকে। “মাইকেল” এই সমস্ত সমস্যা থেকে শতহস্ত দূরে থেকে নিখাদ হাসির মধ্যে দিয়ে মধ্যবিত্ত জীবনের বাস্তবতাকে ছুঁয়ে যায়।
Facebook Comments