আকাশবাণী থেকে Red FM-এর RJ, জার্নি টা কেমন ছিল?
যেই সময় কাজ শুরু করি তখন RJ ব্যাপারটা সে ভাবে প্রচলিত ছিল না, সকলেই জানত রেডিওতে অ্যানাউন্সারের কাজ। একদিন আকাশবাণীতে একটা অ্যানাউুন্সমেন্ট শুনি। “নেওয়া হচ্ছে উদ্ঘাষক ও উদ্ঘাষিকা”। এটা শুনে মা বলেন “তুই যা, গিয়ে দেখ না কি হয়!”। তখনও আমি কলেজে পড়ি। আমার যে যাওয়ার প্রতি খুব গরজ ছিল, এমনটা নয়। রিতিমত ঠেলে পাঠানো হল। গেলাম, আর সিলেকশানও হয়ে গেলো। তারপর বেশ কয়েকবছর আকাশবাণী। ২০০৪-এ এলাম Red FM-এ। তারপর থেকে এটাই আমার সবকিছু হয়ে গেছে।
যারা RJ তাদের কাছে মাইক্রোফোন বোধহয় সব থেকে কাছের হয়, তোমার পাওয়া প্রথম মাইক্রোফোনের অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন ছিল?
একদম তাই হয়, এটা আমাদের প্রাণ। আমার মনে আছে যেদিন আমি প্রথম মাইক্রোফোনের সামনে যাই, সেদিন আমার সঙ্গে একজন সিনিয়র ছিলেন, যিনি আমায় ট্রেনিং দিচ্ছিলেন। পুরো শো তে কিছু সময় যখন আমি কথা বলব। আমার কথা বলার পালা। বুঝতে পারছিলাম গলা পুরো শুকিয়ে গিয়েছে। ভয়ে, চিন্তায়। বারবার মনে হচ্ছিল সকলে আমায় দেখছে। রেডিও তে তো দেখা যায় না। কিন্তু তাও আমার মনে হচ্ছিল দেখছে। বাড়ি ফিরে এলাম। মা বাবা যা হয়, বললেন খুব ভালো হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে। সাহস পেলাম। একদিনেই তো বন্ডিং তৈরি হয়না মাইক্রোফোনের সঙ্গে। সময় লেগেছে। ভালোবাসা বেড়েছে।
RJ-দের দেখা যায় না, যারা শ্রোতা তাদেরকেও তোমরা দেখতে পাওনা! এক্সপ্রেশন ছাড়া একে ওপরের সঙ্গে কথা বলা, এটা কিভাবে কর?
এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলেই ভীষণ ভাবে অ্যাক্টিভ। আমরা এমন কিছু নিয়ে কথা বলি যেটা সকলের জানা। হ্যাঁ এক্সপ্রেশন দেখা যায়না। কিন্তু দেখবে, যদি তুমি কারোর সঙ্গে মন থেকে কথা বল, অনুভূতি তুমি বুঝতে পারবে। আর যখন এটা হয় Red FM-এ তখন তা অন্যরকম হবেই। কারণ আমরা একটা জিনিস ভাবি, তা হল যারা ফোনের ওপার থেকে কথা বলছে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। কারণ তাছাড়া এটা সম্ভব নয়। এই ভবনাটা যখন থাকে তখন সবটা খুব সহজ হয়ে যায়।
তুমি যদি RJ না হতে তাহলে কি হতে?
জানিনা সত্যি কি হতাম। আমি ভাল করে রান্নাও করতে পারিনা। ছোটবেলায় মনে হয়েছিল রাজমিস্ত্রি হব। কখনও কখনও মনে হয়েছিল আইস্ক্রিম বিক্রি করব। যদিও পরে মনে হয়েছিল পড়াতে পারতাম। হয়ত সত্যি ভালো শিক্ষিকা হতাম।
কাজের সুত্রে এরকম কি কখনও হয়েছে কারোর ফোন কল এ অবাক হয়েছো?
হ্যাঁ হয়েছে। কিছুদিন আগেও একটা ফোন পেয়েছিলাম। যখন কেউ ফোন করে বলেন, আপনার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। আপনার কথা শুনলে মন ভাল হয়ে যায়, তখন তা অনেক আশীর্বাদের মত হয়ে আসে। তখন মনে হয় অনেক ভাল করতে হবে। আমি তো আমার ভাল লাগে বলে কথা বলি, তাতে যখন অন্যদের মধ্যে ভাল প্রভাব ফেলে তখন তা নিজেকে আরও অনেক দায়িত্বশীল করে তোলে। আর এই ধরনের ফোন কল গুলো জীবনকে অন্য স্বাদ এনে দেয়।
কাজ আর ইমোশন একে ওপরের সঙ্গে থাকে, এরকম কোন ঘটনা যেটা তোমার সারা জীবন মনে থাকবে?
আমরা প্রচুর সিএসআর অ্যাক্টিভিটি করি। যেমন বলব একটা কাজ এর কথা। “বারুইপুর টু ব্রাজিল”। এটা ছিল দূর্বার সমিতির কিছু ফুটবলারদের জন্য। ওদের ভাল খেলার জন্য চাই মাঠ ও আরও কিছু জিনিস। তার জন্য চাই টাকা। আমাদের রেডিও একটা শো করেছিল। যেভাবে সারা পেয়েছিলাম তা মন ভালো করে দিয়েছিল । আরেকটা মনে আছে, নাম ছিল “আম তেরে নাম”। গরমকালে তো আমরা এত আম খাই। যদি একটু শেয়ার করে খাওয়া যায় তাহলে এর আনন্দই অন্য রকম, দারুণ ভাবে সাড়া দিয়েছিলেন শ্রোতারা। অফিসে এমন ভাবে আম আসতে শুরু হল, সিকিউরিটি দাদারা বলতে শুরু করেন, আর নয় আমের গন্ধে ত্থাকা যাচ্ছে না। যখন আম দেওয়া শুরু করলাম, ওদের চোখে মুখে যে আনন্দ। হাতে চার পাঁচটা আম একসঙ্গে নিয়ে ওই যে ওটা ওদের এই অনুভূতি বোঝা তা অন্যরকম ভালোবাসা।
ছবি সৌজন্যে : WNL
Facebook Comments