বাঙালির প্রাণের এ কবি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও অসামান্য রচনা ও কাজের মধ্যে আজো বেঁচে আছেন তিনি প্রেরণা-দাতা হয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমুখী সৃজনশীলতা বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সব কটি শাখাকে স্পর্শ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। তার লেখা গান বাঙালির হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় আজো। আনন্দে, বেদনায় এমনকি দ্রোহে এখনও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির প্রেরণার উত্স। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মন-মানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। তিনি কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় নন্দিত। ঊন-বিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে পৌঁছে দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চেতনা ছিল- শুধু নিজের শান্তি বা নিজের আত্মার মুক্তির জন্য ধর্ম নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তার ধর্ম। তার দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শনের অন্বেষণ করেছেন।তার কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজো সেই অন্বেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল কলকাতার এক পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১-৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮- ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক।
মাত্র আট বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। ১৮৮৭ সালে ‘ভানুসিংহ’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি ‘গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ’ রূপে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয়। বিবিসির শ্রোতা জরিপে চিরন্তন এ গানটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গান হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ তার রচিত।
Facebook Comments