RJ হবে এটা কি আগে থেকে ভেবে ছিলে?
একদম না। তখন আমি কলেজে পড়ি। ইচ্ছে হল Red FM-এর অফিসে এলাম। এসে বললাম RJ হব। ওরা তো অবাক হল। বলল RJ-এর জায়গা তো ফাঁকা নেই। বিজ্ঞাপন লেখার জন্য লোক নিচ্ছে কাজ করবে? ভাবলাম বয়স তো খুব বেশি নয়। চল করেই দেখি। এই ভেবে হ্যাঁ বলে দিলাম। ওরা আমাকে একটা কপি লিখে আনতে বলল। সময় দিল এক সপ্তাহ। আমি বাড়ি গেলাম। হাতে তো প্রচুর সময়। কর ফেললাম কাজ। আর সঙ্গে সঙ্গে পরের দিন আবার এই অফিস। বললাম কাজ হয়ে গেছে। সবাই তো অবাক। ওই ভাবেই কাজ শুরু। তারপর বেশ কিছুদিন পর ওরা মাইকের সামনে নিয়ে গেল। সেই প্রথম স্বপ্নের দিকে এগোলাম। ওরা জানত আমি মিমিক্রি করি। নিয়ে গেল মাইকের সামনে। খুব খুশি আমিও। ইন্টার্ন হিসেবে নিয়ে নিল। জানতে পারলাম ইন্টার্ন শব্দটা। এই ভাবেই শুরু এই RJ-এর জীবন।
জীবনের মোড় কোথায় তোমার?
RJ হিসেবে কাজ তখন শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু সিরিয়াস নই। আসি কাজ করি চলে যাই। বেশ কয়েক বছর পর মনে হল এবার মন দিয়ে কাজ করার সময় এসেছে। অনেক মজা করে ফেলেছি জীবন নিয়ে। একেক সময় মনে হয়েছে এই প্রফেশন কি ছেড়ে দেব? তারপর শক্ত করে ধরলাম মাইক্রোফোন। ভেবে নিলাম একেই জীবনের উপরে নিয়ে যেতে হবে। ভালোবেসে ফেললাম আরও। ঝাড়খণ্ড-এ ক্লাস সেভেন অবধি পড়াশোনা। ফলে শহরের আদব কায়দার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিতে অনেকটা সময় লেগেছে। জীবনও ফেরতও দিল। এত ভালোবাসা। এত মানুষ।
রেড মুর্গা এই নামটা না করলে তোমায় পাওয়া যাবে না, কিন্তু প্রতিদিন যে টার্গেট করে ফোন কর, কি ভাবে সিলেক্ট কর কাকে ফোন করবে?
আমাদের অফিসে ফোন নাম্বার দিয়ে যা রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, তাতে মোটামুটি সারাজীবন কেটে যাবে। কত মানুষ যে রেগে ফোন করে, “দাদা আমার ফোন তো আর এল না”। কি করে তাদের বলব, কি জানি আদেও আসবে কিনা!”
অন এয়ারে তুমি হয়ত কাউকে হাসাচ্ছ কিন্তু তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে?
হ্যাঁ বহু সময় হয়েছে। আর তা সব RJ-এর সঙ্গে হয়। এরকম হয়েছে আমি অনুষ্ঠান করছি। ফোন এসেছে আমার এক আত্মীয় মারা গিয়েছেন। কাজ শেষ করে খুব কেঁদেছি। কিন্তু আমি চাইনা এরকম কিছু হোক। আমার যখন কান্না পাচ্ছে তখন আমি কাঁদব। রেডিও এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে পার্সোনাল হতে হয় সকলের সঙ্গে, তাহলে আমি কেন লুকাবো! এই দিন তা খুব সামনে যখন আবার রেডিও-এর সংজ্ঞা বদলাবে।
ফোনে অনেক সময় অনেক কিছু প্ল্যান দিতে হয়, সেই গুলো কি ভাবে কর?
আগেই বলি, এটা অনেক আগের কনসেপ্ট যে RJরা বন্ধু হয়। RJ মানুষ। হ্যাঁ তবে প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেক কিছু ভাবনা মাথায় ঘোরে। তার থেকে অনেকটা বাস্তব চেনা হয়ে যায়। কিন্তু RJ রা ভগবান নয়। ওরাও মানুষ।
তোমার গলা শুনে মানুষ চিনতে পেরেছে, এরকম ঘটনা তো হয়েই থাকে, এরকম কোন একটা অভিজ্ঞতা যদি বল?
এটা একটা মজার বিষয়, গলা আর নাম এই দুটো আমায় যে কি কি করায়, যেমন ধরুন আমি হয়ত ক্যাব বুক করেছি, সেখানে অন্য একটা নাম দেওয়া আছে, ফোন করে অন্য রকম গলা করে বললাম “দাদা আমি এখানে আছি আপনি এখানে চলে আসুন, এসে ঠিক বলবে, বুঝতেই পেরেছিলাম আপনি”। জানতে চাই কি করে, “আমি তো আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করি”। ভাল লাগে। যে মানুষ এত ভালবাসে। এই ভাবে সঙ্গে থাকতে চায়।
কি ভাবে প্রোগ্রাম প্ল্যান কর?
আমরা যে সব সময় প্ল্যান করে করি এমনটা হয়না। অনেক সময় এটা বলে শুরু করি, কি নিয়ে কথা বলব জানিনা। এই জায়গা থেকে কাজ করি। যা করব সব রিয়েল। এটা হচ্ছে আসল। সব কিছু ভেবে করতে হবে এমনটা নয়।
Photograph by- What’s New Life
Facebook Comments