“এ দাদা বাবা আর বাঁচবিনে?” “তুই কাকে সব থেকে ভালবাসিস রে- মা রে। না না তোরে” “তাল দিয়ে পয়সা নিস নে রে দাদা, পয়সা নিলে নেমন্তন্ন করবে নে।” সরল মনের প্রশ্ন ঘিরে ছিল অন্ধকার হলটা। দুই ভাই এর ভালবাসা। আর মায়ের যন্ত্রণা কে নিয়ে কাটানো প্রতিটা রাত আসত স্বপ্ন নিয়ে। কখনও ভয় পেয়ে চমকে ওঠা। আবার কখনও মায়ের ডাকে ঘোর কাটা। সব মিলিয়ে কিছুটা সময় নিজের থেকে বেড়িয়ে আসবে দর্শক। গ্রাম এর জীবন। শহরের মানুষের কাছে বিলাসিতার ভ্রমণ। কিন্তু গ্রামে বেঁচেছেন কখনও? এই ছবি চলাকালীন শহরের কোলাহল, ফোনের হাই, হ্যালো থেকে নিয়ে যাবে অনেক দূরে। যেখানে একটা পরিবার। অসুস্থ বাবা, অপারক মা, গোপাল আর ছটু । দুই ভাই একে অপরের জীবন। খিদের জ্বালায় কখনও কাজ করতে যায় পাশের এক বাড়িতে , আবারও পাশের পাড়ায় দিদার সঙ্গে কথা বলে আসে জন্মাষ্টমী তে তাল বিক্রি করবে বলে। মনে মনে একটাই আশা পুজোর দিন তাহলে হয়ত নেমন্তন্ন পাবে। একবেলা ভাল করে খেতে তো পারবে। ভুল ভাঙ্গে। গ্রামের অনেকেই ওই বাড়িতে নেমতন্ন পায় কিন্তু গোপাল রা পায় না। বাবা ভ্যান চালাত বলেই হয়ত। এর মধ্যে আসে টুকরো টুকরো হাসির কোলাজ। দুটো ডিম যে কতটা আনন্দ দিতে পাড়ে তা শুধু জানে না খেতে না পাওয়া দুটো শরীর। মায়ের উপর রাগ করে ভাত ফেলে আসা দাদার জন্য দুটো পেয়ারা আনা মনে করিয়ে দেবে একসঙ্গে বাচতে শেখার মানে। কে বলেছে বলুনতো বড় বড় প্রোডাকশন হাউস বা তথাকথিত তারকা ছাড়া ভাল সিনেমা হতে পাড়ে না! কে বলেছে সিনেমা ভাল লাগাতে হলে বড় বড় মিউজিক কম্পোজার চাই। ঝকঝকে শহর চাই? এই সব কিছু ভুল ভাঙবে। একবার দেখে আসুন অস্কার মনোনীত “সহজ পাঠে গপ্পো”। কিছু কিছু ছবি হয় যার বিশ্লেষণ করতে হয় না। যাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করার ইচ্ছেই হয় না। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “তালনবমী” এই ভাবে পর্দায় ভেসে উঠতে পাড়ে তা ভাবাই যায় না। ডিরেক্টর মানস মুকুল পাল অসাধারন ভাবে নিজের ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ছবিতে। নুর ইসলাম, সামিয়ুল আলম, স্নেহা বিশ্বাস অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে তাদের চরিত্রকে। শকুন্তলা বড়ুয়া যখনই এসেছেন। তখনই অদ্ভুত এক নিশ্চিন্ত লেগেছে। সিনেমাটোগ্রাফি চোখ কে শান্তি দেয়। পুরো ছবি জুড়ে পাওয়া যাবে গ্রামের সোঁদা মাটির গন্ধও। ভেসে আসা সুর আপনার মন কে নিয়ে যাবে বহু আগের সেই সময়ে। যখন নিয়নের আলোয় বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতেন বৃষ্টির খেলা। আমিত্তের জীবন থেকে বেড়িয়ে এসে একবার দেখে নিন সত্যি জীবন। যেখানে লড়াই নিজের সঙ্গে নিজের। দুমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার। ছবি শেষের পর বেশ কিছুক্ষণ থেকে যাবে তার রেষ। একবার ব্যস্ততার থেকে সময় বের করে আরও একবার পড়ে নিন “সহজ পাঠ”। আর আপনার মনে থেকে যাবে এই “সহজ পাঠের গপ্পো”।
(ছবি- কোয়েল পাল সিনহা)
Facebook Comments