শহরের ঐতিহ্যের অঙ্গ ছিল এই হলুদ ট্যাক্সি। কিন্তু সময়ের নিয়মে ক্রমেই তা মুছে যাচ্ছে। বর্তমানে শহরে রয়েছে প্রায় ৭ হাজার হলুদ ট্যাক্সি, যার মধ্যে এ বছরই ৪৫০০-র মতো ট্যাক্সি বাতিলের তালিকায় চলে যাচ্ছে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হলে এই ট্যাক্সিগুলি আর রাস্তায় নামতে পারবে না।
১৯৬২ সালে কলকাতার রাস্তায় প্রথম দেখা মিলেছিল অ্যাম্বাসাডর ট্যাক্সির। সেই থেকে কয়েক দশক ধরে শহরের অন্যতম পরিচিত প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই গাড়ি। কিন্তু অ্যাম্বাসাডর তৈরির কারখানা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই এই নস্টালজিয়া ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে শহরে নতুন নীল-সাদা মারুতি ট্যাক্সি রাস্তায় নেমেছে, যা আস্তে আস্তে হলুদ ট্যাক্সির জায়গা নিচ্ছে।টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-পূর্ব সময়ে কলকাতায় ছিল প্রায় ১৮ হাজার হলুদ ট্যাক্সি। ১৫ বছরের নিয়ম এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ হাজারে। এ বছর প্রায় ৪৫০০টি হলুদ ট্যাক্সি বাতিল হয়েছে বা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে আরও প্রায় ২৫০০টি অ্যাম্বাসাডর বাতিল হতে পারে। এরপর কলকাতার রাস্তায় হয়তো হাতে গোনা কয়েকটি হলুদ ট্যাক্সি দেখা যাবে।শুধু ট্যাক্সি নয়, কলকাতার বাস পরিষেবাতেও পরিবর্তনের ছাপ পড়েছে। গত কয়েক বছরে শহরে প্রায় ১০০টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি বাসের সংখ্যাও কমেছে। এক সময় যেখানে দিনে প্রায় ২৫০০টি সরকারি বাস রাস্তায় চলত, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৭০০-তে।
এক সময় কলকাতার রাস্তার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হলুদ ট্যাক্সি, বাসের মতোই শহরের পরিবহণ ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন আনছে। হয়তো ভবিষ্যতে হলুদ ট্যাক্সি আর দেখা যাবে না, কিন্তু শহরবাসীর মনে তার জায়গা চিরস্থায়ী। শিবপুরের এক চালকের কথায়, “আমাদের ট্যাক্সি শুধু একটা গাড়ি নয়, এটা আমাদের জীবনের অংশ। প্রতিদিন আমরা এক টুকরো কলকাতার ইতিহাস বয়ে চলি।”
Facebook Comments