নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেয়া কোটা আন্দোলনকারীরা একাত্তরের গণহত্যা, মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন এবং এদের সহায়তাকারী রাজাকারদের ভূমিকা সম্পর্কে জানে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Google news
তাদের স্লোগানে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।’
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধোর চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে। লাখো মা-বোন নির্যাতিত। তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশের অত্যাচার করেছে, আমার খুব দুঃখ লাগে যখন রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার।’
‘তারা কি জানে একাত্তর সালের পচিশে মার্চ কি ঘটেছিল সেখানে? তিন’শ মেয়েকে হত্যা করেছিল, ৪০ জন মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওরনা নিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল বলে তাদের সেগুলো পড়তে দেয়া হতো না। ওই এক কাপড়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা হতো।’
এমন একজন মেয়েকে উদ্ধারের এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মিত্র শক্তি ভারতীয় একজন শিখ সৈন্য তার মাথায় পাগড়ি খুলে ওই উদ্ধারকৃত মেয়েকে তার গায়ে পেঁচিয়ে নিয়ে আসে। এটি একটি ঘটনা মাত্র। এমন বহু ঘটনা আছে।’
‘পিরোজপুরের যে মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাকে দিয়ে রান্না করাতো এবং পাশবিক অত্যাচার করতো। কিন্তু এক ফাঁকে সে ওদের খবর নিয়ে নদী পার হয়ে চিতমারীতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দিয়ে আসতো। ধরা পরার পর তাকে দুটো গাড়িতে বেঁধে তার পা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব অত্যাচার রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না। যে বাহিনীগুলো তারা তৈরি করেছিল সেই বাহিনী দিয়ে তাদেরকে লুটপাট করতো মানুষের ওপর অত্যাচার করতো। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিচার করে অনেককে ফাঁসিও দিয়েছি। তাদের দ্বারা যারা নির্যাতিত তারা বিচার পেয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক এখন যখন শুনি মেয়েরাও স্লোগান দেয়! তখন মনে হয় আমরা কোন দেশে আছি! আর এরা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে? কি শিক্ষা এদের দিলো? কি তারা শিখলো? এটাই আমাদের প্রশ্ন।’
মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ভুলে গেলে চলবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। জাতির পিতার একটি ডাকে এ দেশের মানুষ ঘরবাড়ি পরিবার-পরিজন ছেড়ে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করতে চলে গেছে। বিজয় এনে দিয়েছে। যারা রাজাকার বাহিনীতে ছিল তারা এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটা তো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই এদেশ এগিয়ে যাবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরবর্তী যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশকে কি দিয়েছে? কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি, যখনই ক্ষমতায় এসেছি কাজ করেছি। গত ১৫ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
যেখানেই দুর্নীতি সেখানেই ব্যবস্থা
যেখানেই অনিয়ন-দুর্নীতি দেখা দেবে, সেখানেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সমাজকে আরো শুদ্ধ করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্নীতি ধরতে গেলে সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতি খুব কম লোকেই করে, কিন্তু বদনামটা হয় বেশি। এই কারণে যারাই দুর্নীতি করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘সরকারের কি বদনাম হবে, কি হবে না সেটা আমি কেয়ার করি না। আমি সমাজটাকে আরো শুদ্ধ করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ যাতে সৃষ্টি হয় সেই ব্যবস্থাটা নিতে চাই। সেই পদক্ষেপটাই আমরা নিয়েছি যে, এই দুর্নীতিকে কোনোভাবেই প্রশয় দেয়া হবে না।’
যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে, সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে পারলে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় সরকারি কর্মকর্তা-কমর্চারীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসস্থান থেকে শুরু সব ধরনের মৌলিক সুবিধা তাদের দেয়া হয়ছে, যাতে তারা দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজি করতে পারে।’
এই দেশের কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না বলে তার কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ১৮টি জেলা ভূমি ও গৃহহীন হয়েছে। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। অনেকে বিস্মিত হয়ে যায়!’
মূল্যস্ফীতি হ্রাস করতে তার সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সব জায়গাতেই মূল্যস্ফীতি। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং এটা করে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বিগ্রহ পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে গেছে।’
এ জন্য নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে অহেতুক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়াতে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।
Facebook Comments