সিঙ্গালিলা পাস্ এর পথে

 

নিকষ অন্ধকার রাস্তার বাঁদিকে ইউটার্ন নিয়েই সজোরে গাড়ির ব্রেক কষলেন ড্রাইভারজি। হেডলাইটের তীব্র আলো পাহাড়ের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে চুরমার করে দিল। রাস্তা এখানেই শেষ। আমরা পৌঁছে গেছি পশ্চিম সিকিমের নির্জন জনপদ হিলে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে আমাদের ৮জনের দল জোরথাং, দারামদিন, সোমবারিয়া হয়ে প্রায় ১৬০কিমি গাড়ি জার্নি করে এখানে এসে পৌঁছেছি। মাঝপথে জোরথাং-এ লাঞ্চ করার ফাঁকে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করা হয়েছে। আগামীকাল এখান থেকেই আমাদের পথচলা শুরু হবে।

 

আমরা চলেছি সিকিমের বার্সে রডোডেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারির গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সিঙ্গালিলা পাস্ ট্রেকপথে। এই রুটে একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম হিমালয়, নেপাল হিমালয় এবং ভূটানেরও বেশকিছু পর্বতশ্রেণী দৃশ্যমান। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরসীমানায় অবস্থিত সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণী, যার গিরিশিরার ওপর অবস্থিত এই সিঙ্গালিলা পাস্। আর সেই পর্বতশ্রেণী জুড়ে বিস্তৃত সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান। এরই অন্তর্ভূক্ত বার্সে রডোডেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারি, যার বিস্তার ১০৪বর্গ কিলোমিটার এবং যার উচ্চতা ২২০০মিটার থেকে ৪১০০মিটারের মধ্যে। এটি কাঞ্চনজঙ্ঘা বায়োস্ফিয়ারের অন্যতম প্রবেশপথ।

সিকিমের দিক দিয়ে সিঙ্গালিলা পাস্ যাবার দুটি পথ রয়েছে। প্রথমটি, পশ্চিম সিকিমের উত্তরে গ্রাম থেকে হাঁটা শুরু করে সিঙ্গালিলা গিরিশিরা ধরে উঠে যেতে হয় চিত্রে, চিয়াভঞ্জং, আচালে, কালিঝার হয়ে। আর দ্বিতীয়টি আমাদের নির্ধারিত জঙ্গলপথ, যা হিলে থেকে শুরু হয়ে গহীন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বার্সে, দেওনিঙ্গালি ধাপ, থুলোধাপ, আচালে হয়ে আগের রাস্তায় মিশেছে। বেশিরভাগ পর্বত পদযাত্রীই উত্তরে দিয়ে শুরু করে এই পথে ট্রেকিং করা পছন্দ করেন। আমাদের পরিকল্পনা একটু স্বতন্ত্র। সিঙ্গালিলা পাস্ পেরিয়ে সকলেই পশ্চিমবঙ্গের ফালুটে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে অতি উৎসাহীরা সান্দাকফু চলে যেতে পারেন। নাহলে ফালুট থেকে অন্যপথে গোর্খে হয়ে নেমে যেতে পারেন।

 

৮৫০০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হিলেতে পৌঁছতেই আমাদের পূর্ব নির্ধারিত গাইড মিংমা নরবু শেরপা আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। গাড়ি থেকে নামতেই শেষ ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডাটা মালুম হল। সামনেই পর্যটকহীন বনদপ্তরের বাংলো, শীতের রাতে হানা বাড়ির মত দাঁড়িয়ে আছে। এইসময় পর্যটক কম আসেন, তাই তালাবন্ধ। ডানহাতে সামান্য চড়াই বেয়ে ‘হিলে গেস্ট হাউসে’ আমাদের আজকের রাতের ঠিকানা। দীর্ঘ গাড়ি জার্নিতে সকলেই পরিশ্রান্ত। একটু ফ্রেস হয়ে মিংমার সঙ্গে ট্রেকিং রুট নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে নেওয়া হল। ঠিক হল গাইড ছাড়াও টেন্ট, রেশন, বাসনপত্র, জ্বালানী তেল ইত্যাদি বহন করার জন্য ৩জন মালবাহককে নিয়ে যেতে হবে। কাল ট্রেকিংয়ের শুরু। ডিনার সেরে তাড়াতাড়িই সবাই বিছানা নিলাম।

ক্রমশ…..