দীর্ঘদিনের সফল মডেল। ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত ফ্যাশন উইকের র্যাম্পেই তিনি হেঁটেছেন। বিখ্যাত সমস্ত ডিজাইনারদের রিপ্রেজেন্ট করে চলেছেন সেই কেরিয়ার শুরু করার পর থেকেই। কেরিয়ারের এত গুলো বসন্ত পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আজও তিনি সেই আগের মতোই কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তার বাইরে সামলাচ্ছেন স্বামী, সন্তান সহ সংসার। কেরিয়ারের শুরু থেকে কিংফিশার ক্যালেন্ডারের পার্ট হওয়া, সন্তান থেকে শুরু করে সংসার সামলানোর স্ট্র্যাটেজি সব কিছু নিয়ে What’s New Life –এর সামনে অকপট মডেল রুনা লাহা।
মডেলিং, সন্তান, সংসার সব কিছু একসাথে কীভাবে সামলাচ্ছেন?
আসলে আমি এখন কলকাতার বাইরে কাজ করা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি। আসলে আমার ছেলে (ওম) বড় হচ্ছে, তাই ওর সাথে একটু বেশি করে সময় কাটানো দরকার। তাছাড়াও আমার স্বামী খুব সাপোর্টিভ। আমি যখন মডেলিং এর কাজ শহরের বাইরে থাকি, তখন ও এদিকটা সামলে নেয়। আবার ও যখন থাকেনা তখন আমি এই দিকটা সামলাই। এইভাবেই চলছে। আসলে কেরিয়ার এবং পরিবার দুটো জিনিসই ভালোবাসার তো তাই দুটো জিনিসকেই ঠিক ম্যানেজ করে সামলে নিচ্ছি।
তুমি যেই সময় মুম্বাইতে গিয়ে কাজ শুরু করেছিলে সেই সময়ে একটা বাঙালি মেয়ে মুম্বাইতে গিয়ে কাজ করছে, সেরকম খুব বেশি উদাহরন পাওয়া যেতনা। সেই প্রথমের সময় গুলো কেমন ছিল?
র্যাম্পে হাঁটার প্রথম দিনটা সত্যিই একেবারে আলাদা। সেটা কখনোই ভোলার নয়। তুমি যখন র্যাম্প দিয়ে হাঁটছ আর তোমার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে, স্পটলাইট তোমার মুখে, ওই সময়টা সত্যিই কখনো ভোলার নয়। আমার আজও মনে আছে, আমি যেদিন প্রথম র্যাম্পে হাঁটি তখন ওখানে কেউ একজন বলেছিলেন, ‘এই লাইট একবার দেখবার পর এটা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন’। তারপর আমি দিল্লীতে গিয়ে একটা এজেন্সির সাথে কাজ শুরু করি। আসলে মুম্বাই তো সব সেরাদের জায়গা। বিভিন্ন রাজ্যের সফল মডেলরা ওখানে থাকে। তাই আমার মনে হয় একটা অন্য শহর থেকে ওখানে গিয়ে কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে কোন এজেন্সির ব্যাকআপ থাকাটা দরকারি। কেননা প্রথমে তো আমরা ওখানে একেবার নতুন, কাউকে চিনি না। তাই এজেন্সির সাথে থাকাটা জরুরি। আমি দিল্লীতেই আমার এজেন্সির সাথে কাজ শুরু করি। দিল্লীতে অনেক কাজ করেছি। দিল্লী হল ফ্যাশন হাব। তারপর মুম্বাইতে কাজ শুরু করি। মুম্বাই অনেক প্রফেশনাল। ওখানে থাকাকালীন কমার্শিয়াল কাজ বেশি করেছি। তাই আমার মনে হয় তুমি যদি কাজটাকে সত্যিই ভালোবাসো, আর কাজের যায়গায় নিষ্ঠাবান হও তাহলে সাফল্য আসবেই।
সাফল্য পাওয়ার থেকেও সাফল্য ধরে রাখাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। সেখানে তুমি এত দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে নিজের সাফল্য ধরে রেখেছ?
অবশ্যই সাফল্য ধরে রাখা অনেক বেশি কঠিন। আসলে জীবনে কোনকিছুই তো সহজ নয়। তবে আমি খুব প্রবল ভাবে মনে করি যে, নিজের শিক্ষাটা শেষ করা অবশ্যই দরকার। সেটা যে কোন ফিল্ডেই হোক। আমি নিজে খুব ভালো ছাত্রী ছিলাম। আমি পড়াশোনার সাথে কোনদিন আপোষ করিনি। সেই শিক্ষাটা আমার মা-বাব’র কাছগ থেকেই পাওয়া। মা-বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন, ‘যেটুকুই করবে সেটা মন দিয়েই করবে’।
সেই জন্যে আমি মনে করি যেকোন ক্ষেত্রেই নিজের পড়াশোনাটা শেষ করা খুব জরুরী। আমি যদিও আমার কেরিয়ার শুরু করি আমার বিয়ে, আমার সন্তান হওয়ার পর। আমি যদি বিয়ের আগেও আমার কেরিয়ার শুরু করতাম সেক্ষেত্রেও আমি আমি আমার পড়াশোনাটা শেষ করতাম। যতদিন আমি এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম ততদিন আমার মার্কেটিং, পিআর সব ওরাই দেখেছে। কিন্তু যখন থেকে এজেন্সির সাথে করছি না তারপর থেকে এগুলো সব আমিই দেখছি। এখানে আমার পড়াশোনাটা কাজে লাগছে। এখনও আমি নিয়ম করে রোজ বই পড়ি। যদি কোনদিন পড়তে না পারি সেদিন আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তখন নিজের ছেলেকেও বকে দিই। এই অভ্যাসটা ছোট থেকেই তৈরি হয়েছে। এখন যখন নতুন মডেলরা আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তখন আমি ওদের বলি নিজের পড়াশোনা শেষ করতে। আসলে কী বলুন তো আমাদের মডেলিং এর কেরিয়ার খুবই স্বল্পমেয়াদী। তাই মডেলিং এর পরে কী করব তার তো একটা ব্যাকআপ প্ল্যান থাকা উচিৎ।
ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত ফ্যাশন উইকেই তুমি হেঁটেছ। এর মধ্যে স্পেশাল কিছু ঘটনা আছে যেটা তুমি শেয়ার করতে চাইবে?
আমি যখন দিল্লীতে আমার কেরিয়ার সবে মাত্র কিছুদিন শুরু করেছি সেই সময় একদিন আমার এজেন্সি আমাকে তরুন তহলানী’র কাছে পাঠিয়েছিল। সেই প্রথম বার তাকে সামনাসামনি দেখা। তার আগে আমি ওনার কাজ দেখেছি টিভিতে, কাগজে। সেদিন প্রথম দেখেই আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম আমাকে এনার সাথে কাজ করতেই হবে। পরে তরুন তহলানীর সাথে অনেক কাজই করেছি। একদিন উনি আমার খুব প্রশংসা করেছিলেন সেটা আমার কাছে বিশাল একটা পাওয়া ছিল।
ভারতের এলিট সমস্ত ডিজাইনার দের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
খুবই অসাধারণ। প্রথম প্রথম আমি যখন বিভিন্ন ডিহাইনার দের সাথে কাজ করতাম তখন একটা আলাদা অনুভূতি হত। মানে যাদের কাজ সবসময় টিভিতে, কাগজে দেখেছি, তাদের সাথে প্রথম যখন কাজ করি তখন সত্যিই মনে মনে খুব খুশি হতাম।
তুমি কিংফিশার ক্যালেন্ডারেও ছিলে, সেটার অভিজ্ঞতা কেমন?
কিংফিশার ক্যালেন্ডারের পার্ট হওয়াটা সত্যিই খুব গর্বের একটা ব্যাপার। ওখানে অনেক ভালো ভালো ফটোগ্রাফারের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। যেটা সত্যিই খুব বড় একটা ব্যাপার।
কিংফিশারে থাকাকালীন তোমাদের প্রতিদিনের রুটিন কেমন ছিল? হার্ডওয়াক কতটা করতে হত?
প্রথমেই বলে রাখি, একটা দিন এমন গেছে যেদিন আমরা টানা ২৮ ঘণ্টা ফটোশুট করেছিলাম। আমরা কোন মডেল ঘুমাইনি। আমরা যখন কাজ শেষ করি তখন সূর্য উঠে গেছে। তার পরে আমরা দু-ঘন্টার জন্য বিশ্রাম পেয়েছিলাম। বাইরে থেকে যতটা গ্ল্যামারস লাগে এই প্রফেশন টাকে দেখতে, ঠিক ততটাই হার্ডওয়ার্কও কিন্তু রয়েছে। ওখানে খুব নিয়মানুবর্তিতা ছিল। সময় মতো সমস্ত কাজ করতে হত। নিজের জিম, ডায়েট সমস্ত কিছু মেন্টেন করতে হত। অনেকটা বেশি সমউ ধরে শুটিং ছিল। সবমিলিয়ে কঠিন তো ছিলই। আসলে কী বলো তো, কষ্ট না করলে তো আর কেষ্ট পাওয়া যায় না।
বাঙালি মানেই খাদ্যরসিক। তুমি খেতে কতটা ভালোবাসো?
প্রথমেই বলে রাখি, আমি মিষ্টি খেতে প্রচুর ভালোবাসি। এমনও দিন গিয়েছে যখন আমি নিজে মিষ্টির দোকানে গিয়ে অনেকগুলো করে মিষ্টি খেয়ে বেরোতাম। এবং মিষ্টিটা আমি এখনও রোজ খাই। গতকালকেও খেয়েছি, আজকেও খাব। তবে কেরিয়ারের স্বার্থে কিছুটা সামলে চলতে হয়।
মডেলিং এর পর অভিনয়ে যাওয়ার কথা কখনো ভেবেছ?
দেখ, আমি না আমার জীবন আগামী সাতদিন করে প্ল্যান করে রাখি। আসলে আগামীকালকেও তো আমরা থাকবো কীনা তা আমরা জানিনা। তাই অত পরের কথা আমি ভেবে রাখি না। তবে যদি কখনো এমন কোন অভিনয়ের প্রস্তাব আসে যেখানে আমি একেবারে ফিট, তখন করতেই পারি।
ছবি – নিজস্ব চিত্র
Facebook Comments