পৃথিবীর বৃহত্তম এক ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। গাছ ঠাসা জঙ্গলের কোথাও কোথাও সূর্যর আলোকেও প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয় এখানে। বিস্তার প্রায় ১৩৩০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে, যার পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে রয়েছে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ১০২টি দ্বীপ। রহস্য, রোমাঞ্চ আর স্বকীয়তায় ভরপুর এই অরণ্যকে দেখতে হলে, বিদেশে ভ্রমণ নয়, খোদ ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গে চলে এলেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের ঠিক পায়ের তলাতেই রয়েছে এই সুবৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য যা সুন্দরবন বলেই পরিচিত। এই অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর সব থেকে বেশী সংখ্যক দ্বীপও, তাই এই অঞ্চলের আরেক পরিচিতি গ্রীন ডেল্টা নামে। গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্রের মিলনস্থলের অববাহিকায় এ এক আশ্চর্য বিস্ময়। বিস্তৃত সবুজের এই বনভূমির সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল এখানকার অসংখ্য গাছপালায় মোড়া আরণ্যক প্রকৃতি এবং অবাক করে দেওয়া জীব বৈচিত্র্য। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই বনভূমির প্রতি পদে পদেই বিস্ময়। নোনাজলের নদী, নালা, খাল, বিল আর খাঁড়ির ফাঁকে ফাঁকেই রয়েছে কুমীর, কামট, কাঁকড়া, শুশুক, নানাবিধ মাছ, অজস্র পাখী আর রাজকীয় চলনে অভ্যস্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। রয়েছে কেউটে, চিতি, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খচুড়, কালাচ, আর দাঁড়াশের মত অসংখ্য সাপ। আছে নরম কাদামাটিতে বাস করা এক উভয়চর মাডস্কিপার। দৈনিক জোয়ার ভাটার টানের সাথেই আশ্চর্য সহাবস্থান চলে এখানকার বাস্তুতন্ত্রের। এছাড়া রয়েছে গর্জন, গড়ান, বাইন, কেওড়া, আমুর, সুন্দরী আর হেঁতাল গাছে মোড়া বিস্তৃত বনভূমি যাদের অভিজাজনে সাহায্য করছে অদ্ভুত দর্শন ঠেসমূল, শ্বাসমূল আর অধিমূলেরা। পাল্লা দিয়ে ততটাই আশ্চর্যজনক আর কঠোর এখানকার বাসিন্দাদের রোজনামচা। মধু, মোম, কাঠ, মীন আর কাঁকড়া সংগ্রহর জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই চলে কাঠুরে, মৌলে আর মৎসজীবীদের। রহস্য, রোমাঞ্চ আর বিভীষিকায় ঘেরা এই জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ – অঞ্চলে অহরহ আসে দেশী এবং বিদেশী পর্যটকরা। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চল এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মাথায় তাই আজ ইউনেস্কোর দেওয়া ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা।
Facebook Comments